৯ এপ্রিল সিডনির মিন্টোর ইনডোর স্পোর্টস স্টেডিয়ামে সিডনি বাঙালি কমিউনিটি ইনক্ আয়োজিত বাঙালিদের আকর্ষণীয় এবং বৃহত্তম ঈদ এক্সিবিশন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ থেকে আয়েজিত এই ঈদ এক্সিবিশনটি সিডনিবাসীদের পরিধি ছাড়িয়ে নিউ ক্যাসেল, ক্যানবেরা এবং মেলবোর্ন পর্যন্ত গড়িয়েছে।
সকাল সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল সরকারের হুইপ এনি স্ট্যানলি এমপি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার জনপ্রিয় সংগঠন সিডনি বাঙালি কমিউনিটি অস্ট্রেলিয়ার মাল্টি কালচারাল সমাজে নিজেদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মাতৃভাষা ধরে রাখার জন্য অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। তিনি ঈদ এক্সবিশনের আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম সেলিমা বেগমকে ধন্যবাদ জানান কমিউনিটির সাথে এই সুন্দর সম্পৃক্ততার জন্য।
সিডনি বাঙালি কমিউনিটি ইনক্ এর সাধারণ সম্পাদক সেলিমা বেগম বলেন, আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশী আমেজ এবং আনন্দে ঈদের কেনাকানা ও উৎযাপনের সহায়ক হওয়া। সেই সাথে অস্ট্রেলিয়াতে বসবাসরত ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা যারা দেশীয় বুটিক ও ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে কাজ করছেন তাদেরকে কমিউনিটিতে পরিচিত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়া। প্রজন্ম যেন অস্ট্রেলিয়াতে থেকেও বাংলাদেশের ফ্যাশান, জিজাইন ও ঐতিহ্যে আকৃষ্ট হয় সেইদিকটাও আমাদের বিবেচ্য বিষয়। অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশী ফ্যাশান, ডিজাইনের প্রসারের বিশেষ বিবেচনায় ২০১৯ সালে সিডনি বাঙালি বুটিক ক্লাবের সূচনা এবং সেই থেকে সিডনি বাঙালি বুটিক ক্লাবের সদস্যদের সাথে নিয়ে ঈদ এক্সিবিশনের আয়োজন করছি আমরা। এই বছর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বাঙালিদের বৃহত্তম ঈদ এক্সিবিশনটি করার পিছনে বুটিক ক্লাবের সকল সদস্যের ঐক্যবদ্ধতা এবং স্থানীয় কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের সহযোগীতা ও উৎসাহ বিশেষভাবে উল্লেখ্য।
ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী বলেন, অত্যন্ত সুন্দর এবং পরিপাটি পরিবেশে সিডনি বাঙালি কমিউনিটি ঈদ এক্সিবিশন করে আসছে বিগত বছরগুলোতে, আর এক সাথে এতগুলো বুটিক হাউজকে নিয়ে এতো বড় ঈদ এক্সিবিশন করার পাশাপাশি বাঙালি মুসলিম কমিউনিটির ঈদ বাজারের সুযোগ করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই আয়োজকদের।
এছাড়াও স্থানীয় নেতৃবৃন্দদের মধ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা রাখেন সফিকুল আলম, মাসুদ পারভেজ, মনিরুল ইসলাম জর্জ, নির্মল পাল, সাকিনা আক্তার, আরেফিনা মিতা, মোঃ হাদী, মাহফুজ চৌধুরী খসরু, মোঃ সোবহান , মোবারক হোসেন, লিয়াকত আলী লিটন, আশিক রহমান, কামাল পাশা, ফারুক আহমেদ প্রমুখ।
ঈদ এক্সিবিশনে বিশেষ আকর্ষন ছিল জামদানি শাড়ির প্রদর্শনী, দিল্লী বুটিক এর কালেকশনসহ উপমহাদেশের ঈদ কালেকশন। মেয়েদের ফ্যাশন ডিজাইনের নতুন কালেকশনের পাশাপাশি ছেলেদের জন্য ছিল পাঞ্জাবি, ফতুয়া, কোটি, চাদর, নাগড়া, জুতি,টুপি। শিশু-কিশোরদের ঈদ কালেকশন নিয়ে বুটিক শপে ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম সাতরঙ সিডনি, সোয়ান, অপশরা, আডায়ানা জায়ানি, নানান রং, কেজে এটিলিয়ের, জেসমিন আর্টারি, পার্ল ফ্যাশান, কাস্ট ক্রিয়েশন। গয়নার ঈদ কালেকশন নিয়ে বরাবরের মতন উপস্হিত ছিল এক্সক্লুসিভ জুয়েলারি, গোল্ডেন ফাইবার, মারিয়া’স কালেকশন, জে এন্ড জে কালেকশন সহ অন্যান্য বুটিক শপগুলো। ঈদ এক্সিবিশনের ৬০টি স্টলে ছিল দেশীয় ও উপমহাদেশীয় নানান রকমের ফ্যাশন সামগ্রী ও নামকরা ডিজানার কালেকশনসহ ঈদ স্পেশাল কালেকশন। বাংলাদেশের রাজশাহী, টাঙ্গাইল, মিরপুর, রাঙ্গামাটি, সোনারগাঁ, কুমিল্লা, সিলেট, নরসিংদী, পাবনা এবং ঢাকার তাঁতীদের বুনানো বিভিন্ন সামগ্রীর সরবরাহ ছিল চোখে পড়ার মতন। এবারের আয়োজনে নতুন সংযোজন ছিল বিউটি ও প্রসাদনী সামগ্রীর স্টল।
আবহাওয়া চমৎকার থাকাতে এক্সিবিশনে সারাদিন ব্যাপী ছিল সিডনির বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাঙালিদের আগমন। দেশীয় আমেজে ঈদের কেনাকাটার সুযোগ পেয়ে সিডনির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বপরিবারে ক্রেতারা উপস্থিত হয়ে ঈদ এক্সিবিশনটি উৎসব মুখর করে তোলেন। ক্রেতাদের ইফতার এবং রাতের খাবারের জন্য “গ্রীল এন্ড চীল” এর ছিল বিশেষ আয়োজন। ঈদ এক্সিবিশনের সার্বিক সহায়তায় ছিলেন আতিক হেলাল, সামিয়া ইসলাম, অজয় দত্ত, শুভ্র চৌধুরী, অর্পিতা সেন, ফারজানা তানিয়া, ঐহিক তারিক, রয়া, রুনা।
অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক এবং মিডিয়া গ্রুপের সহায়তায় ঈদ এক্সিবিশনের প্রচার ছিল সারা মাস জুড়ে। আয়োজকরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মিন্টো ইনডোর স্টেডিয়ামের কর্তৃপক্ষকে যাদের আন্তরিকতা এবং সহযোগীতায় সম্ভব হয়েছে মিন্টো ট্রেন স্টেশনের পাশেই এক হাজার কার পার্কিং এর সুবিধা নিয়ে সিডনি বাঙালি কমিউনিটি ইনক্ এর এই বিশাল ঈদ এক্সিবিশনের আয়োজন।
উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ এক্সিবিশনটি শেষ হয় রাত ১০টায়। সিডনি বাঙালি বুটিক ক্লাবের সাফল্য কামনায় প্রত্যাশা ইকবালের স্পন্সার করা কেক কাটার মধ্য দিয়ে সিডনি বাঙালি কমিউনিটি ইনক্ এর ২০২৩ এর প্রথম ঈদ এক্সিবশনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। সমাপনি বক্তব্যে সেলিমা বেগম ক্লাবের সকল সদস্যদের তাদের ঐক্যবদ্ধতার জন্য এবং সেই সাথে ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে দেশীয় সামগ্রীর সরবরাহ বৃদ্ধি করার জন্য ধন্যবাদ জানান। ঈদ এক্সিবিশনের সার্বিক পরিচালনা এবং পরিকল্পনায় ছিলেন সিডনি বাঙালি কমিউনিটি ইনক্ এর সেলিমা বেগম ও আবু তারিক।