গত ১০ দিনে সিলেটে ১০ দফা ভূমিকম্প হয়েছে। গত সোমবার দেড় মিনিটের মধ্যে দুই দফা ভূমিকম্পে নগরীর ঐতিহ্যবাহী রাজা জি সি উচ্চবিদ্যালয়ের একটি ভবনে অসংখ্য ফাটল দেখা দিয়েছে। এর আগে গত ২৯ মে সাত বার এবং ৩০ মে এক বার জেলায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
তখন নগরীর পাঠানটুলা দর্জিবাড়ী এলাকায় ছয়তলার একটি ভবন হেলে পড়ে। এত ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়ায় সিলেটের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সিলেটের ছয়টি মার্কেটসহ ২৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বন্ধ করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন।
এটিকে অনেকে স্বাভাবিক বললেও বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, সিলেট নগরের নিচে কোনো ফল্ট লাইন নতুন করে তৈরি হয়েছে কিনা সেটি জরিপ করে দেখা দরকার। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা প্রস্তুতির ওপর।
সিলেট নগরে গত সোমবার সন্ধ্যায় এক মিনিটের মধ্যে দুবার ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর আগে ২৯ মে সকালে সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে সাতবার এবং পরদিন ভোর সাড়ে ৪টায় আরেকবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সবগুলো ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের আশপাশের এলাকা। নগরের আশপাশের এলাকার বাইরে কেউ ভূমিকম্প টের পাচ্ছে না।
সাধারণত সিলেটে হওয়া ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হয়ে থাকে আসাম, ত্রিপুরা কিংবা মেঘালয়। তবে এবার ভূমিকম্পের উৎসস্থল ভিন্ন। সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী গত ১০ দিনে হওয়া ভূমিকম্পের বেশির ভাগের উৎপত্তিস্থল ছিল রাতারগুল, পাশের জৈন্তাপুর উপজেলার সারি নদীর আশপাশ এবং সর্বশেষ সোমবার হওয়া জোড়া ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল সিলেট আবহাওয়া অফিস থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নে।
ভূমিকম্পসংক্রান্ত নানা বিষয়ে সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের জানা মতে নগরের আশপাশে কোনো ফল্ট লাইন নেই। তবে এখন যেহেতু ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে এবং এসবের উৎপত্তিস্থল দেখা যাচ্ছে সিলেটের আশপাশের এলাকা, তাই এটা নিয়ে নতুন করে ভাবা জরুরি। এ জন্য গবেষণা ও জরিপ জরুরি। কারণ সিলেটে নতুন করে কোনো ফাটল বা ফল্ট লাইন তৈরি হয়েছে কি না, এটা দেখা দরকার।’
এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘যাঁরা আগে জরিপ করেছিলেন অর্থাৎ ভূমিকম্পের জোনগুলো চিহ্নিত করে ভাগ করেছিলেন, তাঁরাই কাজটি করলে ভালো হয়।’ এটা দ্রুত করা দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২৯ মে ভূমিকম্পের পর এই ১০ দিনে এটা করা গেলে ভালো হতো। যদি পুরো সিলেটে জরিপ করা না যায়, তাহলে আপাতত জালালপুরের আশপাশের কয়েকটি জায়গায় করে দেখা যেতে পারে।’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমদ বলেন, ‘ভূমিকম্প হবেই, এটা আমরা প্রতিরোধ করতে পারব না। তবে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।’
সিসিকের জরুরি সভা আজ : সিলেটে ১০ দিনের মধ্যে ১০ দফা ভূমিকম্পের পর নড়েচড়ে বসেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। করণীয় নির্ধারণে আজ বুধবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে তারা। সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ‘শাবির উপাচর্যের সঙ্গে আমি এরই মধ্যে কথা বলেছি। সভায় নগরের সব ভবন জরিপের পরিকল্পনা করা হবে। এরপর যেসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা : সিলেটে সোমবার দুই দফা ভূমিকম্পে নগরের ঐতিহ্যবাহী রাজা জিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনে অসংখ্য ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
স্কুল ভবনে ফাটলের খবর পেয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল হাকিমের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল হাকিম বলেন, ‘ভবনটি প্রায় ২৮ বছর আগে তৈরি হয়েছিল। ভবনটি ওই সময়ে ভূমিকম্প সহনীয় মাত্রায় তৈরি করা হয়নি। তাই ভূমিকম্পে ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।’