২৭ জুলাই, ২০২৪, শনিবার

সোমবার থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ ; তিনগুণ ভাড়ায় ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

Advertisement

সারা দেশ যেকোনো মুহূর্তে ১৪ দিনের শাটডাউনে যেতে পারে- বৃহস্পতিবার সরকারের এমন ঘোষণার পর উৎকণ্ঠা বেড়েছে মানুষের মধ্যে। পরিস্থিতি ঈদুল ফিতরের মতো হতে পারে আশঙ্কায় অনেকেই বাড়তি ভাড়া দিয়ে বিকল্প পথে ঢাকা ছাড়ছে এখনই।

সম্ভাব্য শাটডাউনের খবরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর গ্রামে ফিরতে উদগ্রীব মানুষের ঢল নামে গাবতলী বাস-টার্মিনালে। তাদের বেশিরভাগ ছিল নিম্ন আয়ের মানুষ। কিন্তু আগে থেকেই চলমান লকডাউনের কারণে দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়ে তারা। তবে বাস না চললেও যাত্রীদের দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় ভিন্ন পন্থায় যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায় পরিবহন শ্রমিকদের। নিরুপায় হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়েই বিকল্প বাহনে ঢাকা ছাড়তে দেখা যায় দুর্ভোগের শিকার হওয়া মানুষগুলোকে।  

শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে গাবতলী বাস-টার্মিনালের একটি বেঞ্চে দুজন সহযোগীসহ বসে ছিলেন ফরহাদ (৪০) নামের এক পরিবহন শ্রমিক। একপর্যায়ে ফোনে কথা বলেন সাগর নামের কারও সঙ্গে। দ্রুত গাড়ি পাঠাতে বলেন। খুব খুশি দেখায় তাকে। পাশে বসা সহযোগীদের বলেন, ‘এবারও গতবারের মতো ইনকাম হইবো, লকডাউন দিয়ে ভালোই হইছে।’ 

শিশিরের সামনে তখন বেশকিছু লোকের জটলা। সবার হাতে ও কাঁধে ব্যাগ। সবাই নাটোর, রংপুর ও রাজশাহীর রুটের যাত্রী। কিন্তু দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় যেতে পারছে না। এদের মধ্যে কারও কারও না গিয়ে উপায় নেই। এটা বুঝতে পেরে সুযোগ কাজে লাগান শিশির। বলেন, রাজশাহীতে যাওয়া যাবে; কিন্তু ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১৫০০ টাকা। ১১ সিটের হায়েস গাড়ি। যেতে হলে এখনই টাকা দিতে হবে। কিন্তু যাত্রীরা এক হাজারের বেশি দিতে রাজি নন। চলে দরকষাকষি। এর মধ্যে গাড়ি চলে আসে।

 যেতেই হবে, তাই ১৫০০ টাকাতেই রাজি হন ছয়জন, দেন অগ্রিম। ছয়জনকে নিয়েই গাড়ির দিকে রওনা হয় শিশিরের সহযোগীরা। তাদের অনুসরণ করে দেখা যায়, টার্মিনালের পেছনে পুলিশ বক্সের কাছেই ফাঁকা রাস্তায় দুটি সাদা রঙের হায়েস গাড়ি দাঁড় করানো। এর একটিতে যাত্রীদের তোলা হয়। কিন্তু গাড়ি ছাড়তে দেরি হবে, কারণ আরও পাঁচজন যাত্রী দরকার।

 সেখানে এক যাত্রী বলেন,‘একটি লিফট কোম্পানিতে চাকরি করি, রাজশাহীর একটি হাসপাতালের লিফট নষ্ট হয়ে গেছে, জরুরিভাবে সেটিকে সারাতে হবে। লিফট ছাড়া হাসপাতাল অচল, অনেক অসুস্থ রোগীর ওঠা-নামার জন্য লিফট অপরিহার্য। তাই যেভাবেই হোক যেতে হবে।’

 বৃহস্পতিবার রাত ১০টা গাবতলী পুলিশ বক্সের কাছে স্ত্রী ও ছোট দুই সন্তান নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক পোশাক শ্রমিক। তিনি বলেন, শুনেছি, সরকার ১৪ দিনের শাটডাউন দেবে। এবারও হয়তো রোজার ঈদের মতো হবে। তাই আগেভাগে বাড়ি চলে যাচ্ছি। করোনার কারণে রোজায় আমার স্ত্রীর চাকরি চলে গেছে, আমার চাকরিও নড়বড়ে। এমন পরিস্থিতিতে চারজনের খরচ মেটানো কঠিন। গ্রামে গেলে অন্তত বাসা ভাড়া দিতে হবে না। কিছু একটা করে খেতে পারব। কিন্তু আটকা পড়ে গেলে দুই মাসের ঘরভাড়া দিতে হবে, যা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। 

আরিচামুখী এরকম একটি প্রাইভেটকার যাত্রীপ্রতি পাটুরিয়াঘাট পর্যন্ত জনপ্রতি অগ্রিম ভাড়া নেয় ৫০০ টাকা। গাবতলীতে রাস্তায় এরকম অনেক প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস দাঁড়ানো ছিল। সেগুলোয় যাত্রী তুলছিলেন পরিবহন শ্রমিকরা। প্রত্যেকটিতে ভাড়া নেওয়া হচ্ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত তিনগুণ। আর এসব কিছুই ঘটে খোদ পুলিশের চোখের সামনে।

 নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্যামলীর এক রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী বলেন, আমার তিনটা হায়েস গাড়ি এভাবে ভাড়ায় চলছে। পরিবহন শ্রমিকরাই যাত্রীর ব্যবস্থা করে। ১১ সিটের গাড়িতে ওরা ১৩-১৪ জন তোলে। গাড়িপ্রতি আমাকে ১০ হাজার টাকা দেয়। বাকিটা দালাল-পুলিশকে দিতে হয়। ওরা গাবতলীর পুলিশকে দেয়, আমি দেই ঢাকার বাইরের পুলিশকে।

 খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলমান লকডাউনের প্রথম দিন রাত ৮টায় গাবতলী থেকে খুলনার পাইকগাছার উদ্দেশে কিংফিসার ও গ্রিনবাংলা পরিবহন এবং রংপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায় এসআর পরিবহন। প্রতিটি যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হয় ১ হাজার টাকা। সেটাও ঘটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই।

এ প্রসঙ্গে দারুসসালাম জোনের দায়িত্বে থাকা ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) ইত্তেখায়রুল ইসলাম বলেন, গাবতলী থেকে কোনো গাড়ি বের হওয়ার সুযোগ নেই। পুরো সড়ক আমরা সিলগালা করে দিয়েছি। তিনি বলেন, গাবতলী ব্রিজের ওপারটা আমাদের আওতার বাইরে। তবে প্রাইভেটকার এবং মাইক্রোবাসে যাত্রী পরিবহনের বিষয়টি আমার জানা নেই। এমন কিছু ঘটলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব আমরা।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement