সমন্বিত গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভিন্ন মত দেওয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে মারধরের ঘটনায় তিনটি অডিও ক্লিপ অ্যাকাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিকের সঙ্গে ভুক্তভোগী শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল কাদেরের কথপোকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে।
একটি ২ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপে বলতে শোনা যায়, অধ্যাপক শফিক বলেন: একটা কথা কই, তুই কিন্তু আমার ভাই। মারস, কাটস, গালিগালাজ করস, তুই আমার ভাই। তোর আল্লাহর দোহাই লাগে কোনো অবস্থায় জিনিসটারে আর সামনে না আগাই।
আব্দুল কাদির: আমি ঠেকাব কীভাবে, আমার কি করতে হবে বলেন?
অধ্যাপক শফিক: কি করতে হবে মানে, আবুলকে ধরে নিয়ে আসব, আবুল তো যত বাড়া বাড়ছে, সে আবুল আজকে তো বাড়ে নাই। তোর তো বুঝতে অনেক দেরি হয়েছে।
আমার নমিনেশনটা কনফার্ম না কইরা তোরা এ দরবারটা লাগাইছস। নেতা তো তোরা তৈরি করছস। যেভাবে হোক কালকে বসি বা পরশু বসি তোর বাসায়। আবুল লুৎফরকে নিয়ে আরও যারা যারা আসা লাগব তাদের নিয়া। জিনিসটা কিন্তু আবুল একবার মাফ চাইছে ওখানে, আবার মাফ চাইবে, আমি মাফ চাই। গ্রুপে আর ঝামেলাটা বাধাইস না। ভাই আল্লাহর দোহাই জাকারিয়ারে আর সুযোগ দিস না, ওই গ্রুপটারে আর সুযোগ দিস না। …. কথা বুঝস কি বুঝস নাই?
অধ্যাপক কাদের: বুজছি ভাই।
অধ্যাপক শফিক: তুই আমার ভাই। …তুই কি আমার ভাই, না ভাই না?
অধ্যাপক কাদের: ভাই তো বটেই।
অধ্যাপক শফিক: তুই তোর অ্যাসাইনমেন্ট বাস্তবায়ন কর। যা অ্যাসাইনমেন্ট আছে সেগুলো বাস্তবায়ন কর।
অধ্যাপক কাদের: আমার কোনো অ্যাসাইনমেন্ট নাই।
অধ্যাপক শফিক: তোর আল্লার দোহাই জিনিস্টা নিয়া যেন আর বাড়াবাড়ি না হয়। তোর আল্লাহর দোহাই। গতকাল কিন্তু তুই আমারে কিল খাওয়াইছস, কিল কিন্তু আমি খাইছি এটা কাউরে আমি বলতে পারি নাই।
অধ্যাপক কাদের: এখন আমার করণীয় কি?
অধ্যাপক শফিক: করণীয় হলো তুই এখন মুখটা বন্ধ রাখবি, আমি আবুল হোসেনকে বলি তোরে ফোন দেওয়ার জন্য, লুৎফরকে বলি তোরে আবার ফোন দেওয়ার জন্য। এদের নিয়া সবাই ইফতারের পর তোর বাসায় আসি। কোন জায়গায় আমু তুই জায়গা আর টাইম ঠিক করে আমাকে জানা।
অধ্যাপক কাদের: আজকে তো সম্ভব না, এখন আমি ক্লাসে যাচ্ছি।
অধ্যাপক শফিক: ক্লাস থেকে বের হয়ে আমাকে ফোন দে।
অপর এক ২ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের ক্লিপের কথোপকথনে অধ্যাপক শফিককে বলতে শোনা যায় আমি কি ফিরাইতে গিয়া ভুল করলাম।
অধ্যাপক কাদের: কেন
অধ্যাপক শফিক: আমাকে অভিযুক্ত বানাইয়া, মানুষ ফোন টোন দিয়া, তোরে মারতে মারতে আমি রাখি নাই। এটা কোনো কথা হইলো।
অধ্যাপক কাদের: এখন কি বলবো বলেন।
অধ্যাপক শফিক: আবুল, লুৎফরা তোর সামনে গেলে আমি কি বসে থাকবো? আমি তোর সামনে গিয়া দাঁড়াবো না।
অধ্যাপক কাদের: পত্রিকায় তো অনেক নানারকম রিপোর্ট আসে। আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছে আমি কিন্তু কারো নামই বলি নাই।
অধ্যাপক শফিক: কেউ বললে তুই নাম বলবি না কেন অবশ্যই বলবি।
অধ্যাপক কাদের: সেটা তো আমার মনে নাই।
অধ্যাপক শফিক: আব্দুল্লাহ ভাই আমি ফিরাইছি কিন্তু আমরা দুইজনই। আর কেউ ফেরায়নি।
অধ্যাপক কাদের: সেটা এখন বলবো। অসুবিধা না।
অধ্যাপক শফিক: ফেরানো যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে পানিশমেন্ট পাবো অসুবিধা নাই।
অধ্যাপক কাদের: না না কেন পানিশমেন্ট হবে।
অধ্যাপক শফিক: অভিযুক্ত দিলে তো বেডা কাঁঠগড়ায় দাঁড়াই গেছিগা না।
অধ্যাপক কাদের: সেটা পত্রিকায় তো আসেই।
অধ্যাপক শফিক: আমিতো প্রথম মনে করছি এরা বসানোর জন্য গেছে কারণ লুৎফর ভাই, আবুল ভাই, জাকির স্যার, এরপর হইলো জামাল, আলিম ভাই এরা একটা কোর টিম আসছে। আমি প্রথম মনে করছি এরা বসানোর জন্য গেছে পরে তো দেখি ঘটনা অন্যরকম। এরপর আমি দৌড় দিয়া গেছি আমি দৌড়ে যাওয়ার পর তো কিছু হয় নাই। এরপর আমি বলছি একটা কিচ্ছু করতে পারবেন না। সরেন এখান থেকে সবাই। এরপরই তো সরে গেছে সবাই।
অধ্যাপক কাদের: হুম
অধ্যাপক শফিক: এখন তো অভিযুক্তের কাতারে আমাকে মেরে দিছিস।
অধ্যাপক কাদের: না না।
অধ্যাপক শফিক: ঠিক আছে রে…
আরেকটি ১৭ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের এক ক্লিপের কিছু অংশের কথোপকথনে শফিকুজ্জামানকে বলতে শোনা যায় যে তুই কি আমার ভাই না ভাই না ক তো? তুই কিন্তু আমার গালের মধ্যে চড় দিতাছস।
অধ্যাপক কাদের: টেবিলে তো আমি আঘাত করতে পারি, কিন্তু সে কি আমার গায়ে হাত দিতে পারে।
অধ্যাপক শফিক: লুৎফর ভাই তো মাপ চাইছে আবার কথা কেন।
অধ্যাপক কাদের: আমাকে কথা বলতে দিলেই তো হয়। আমাকে কেন কথা বলতে দেওয়া হলো না। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দল, সাদা দল মিলে কাজ করছে। দুই দিন পর বলবে এখানে উপাচার্য থাকবে না, ইউজিসি থাকবে না, মন্ত্রণালয় থাকবে না, দুদিন পর বলবে প্রধানমন্ত্রীও থাকবে না। বিএনপি কি এখনই ক্ষমতায় চলে এসেছে নাকি।
অধ্যাপক কাদের: আন্দোলন করবেন ভালো কথা তাই বলে রেজুলেশনটাও উপাচার্যকে লিখতে দিবেন না নিজেরা লিখে এনে বলবেন সাইন দেন এরা কোন পক্ষের শক্তি? একপর্যায়ে তিনি বলেন নূরে আলম আব্দুল্লাহ ভাইয়ের একটা কথা ভালো লেগেছে, সে বলেছে ওরে কেন মারছেন। আবার কিছু কিছু ম্যাডাম দেখলাম দূর থেকে বলছে যে আরও মারেন আরও মারেন।
আব্দুল কাদের: মিটিংয়ের যে অবস্থা দেখলাম তাতে মনে হলো বিএনপি ক্ষমতায় চলে এসেছে। রইছ উদ্দীন বক্তব্য দিচ্ছে আর সবাই মনোযোগসহকারে শুনছে। এমন অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনদিন ছিলই না। পরিশেষে শফিক কাদেরকে বলেন তুই ঘুমা তোর কাছে রিকুয়েস্ট। শরীর ভারী ভারী হয়ে গেছে তোর।
অডিও ক্লিপের বিষয়ে অধ্যাপক কাদের বলেন, আমি তো কোনো অডিও ক্লিপ কাউকে দেইনি। আমি জানিও না। আর আমার আইফোনে কল রেকর্ডও হয় না। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।
এর আগে গত ৬ এপ্রিল উপাচার্যের কনফারেন্স রুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিল সভায় ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল কাদেরকে মারধরের ঘটনা ঘটে তারই সহকর্মীদের দ্বারা।