২৭ এপ্রিল, ২০২৪, শনিবার

আগুন পান

Advertisement

গতিময় এই নগরীতে এসে মিশেছে নানা দর্শন আর দেশের ঐতিহ্য। এসব ঐতিহ্যের হাত ধরে চালু হয়েছে হরেক রসনা বিলাসও। কিন্তু মাটির ঐতিহ্যে নতুনত্ব সবসময়ই সাড়া জাগিয়েছে সাধারণের প্রাণে। এইতো কিছুদিন আগেই অস্ট্রেলিয়ান মাস্টার শেফ-এ বিচারকদের পান খাইয়েছিলেন বাঙাল ভূমের কিশোয়ার। বাঙালির ডেজার্ট আইটেমে মিষ্টি, দই এসবের প্রভাব পুরনো। তবে সেসবকে ছাপিয়ে কিশোয়ার যে ‘পান’ উপস্থাপন করবেন সেটাই বা কে ভেবেছিলো।

তবে কিশোয়ারের উপস্থাপনায় বোঝা গেছে পানের সাথে বাঙালির টান। সাধারণ এক গাছের পাতাকে মোরব্বা, কোরমা, সুইট বল দানা, কালিজিরা, তবক, সুপারি, একাঙ্গী, চুন, লবঙ্গের আলিঙ্গনে ‘বিশেষ’ করে তোলার প্রক্রিয়া কখনো কখনো শিল্পের পর্যায়ে চলে যায়। আর সেই পানকে আরো বিশেষত্ব পূর্ণ করতে মশলা দিয়ে আর বুকে জ্বালিয়ে দেয়া হয় আগুন। নাম দেয়া হয় ফায়ারপান। বাংলা আর ইংরেজি নামের মিশ্রণে তৈরী এ পানের লা-জবাব এক স্বাদ লাভ করেন পানপ্রেমীরা। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই যুগে তীব্র গতিতে চাউড় হয় ফায়ার পানের বৃত্তি।

প্রথমদিকে নাজিরাবাজার, আগা সাদেক রোড, সিক্কাটুলি জুড়েই ছিলো বাহারি পানের সমাহার। তবে এখন সবর্ত্রই আগুন পান। আগুন পানের টানে অনেক দূর থেকে ছুটে আসেন রসনা বিলাসীরা।

এভাবেই নাজিমুদ্দীন রোডে ঢোকার মুখেই চোখে পড়লো এক দোকানি পান সাজাচ্ছেন। প্রায় ৩০/৩৫টি আইটেম দিয়ে পান সাজালেন। তারপর একটি বিশেষ তরল ঢেলে দিলেন পানে। লাইটার কাছে নিতেই জ্বলে উঠলো পান। তারপর দ্রুত আগুনপান ক্রেতার মুখে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। আকস্মিক উত্তেজনায় পানপ্রেমী চোখমুখ কুঁচকে আছেন। একটু পরই পান চিবিয়ে হেসে উঠলেন তিনি। তারপর আরেকজনের পালা পান খাওয়ার পর কথা হচ্ছিলো পেশায় আইনজীবী ঢাকার দক্ষিণখানের বাসিন্দা এবিএম জোবায়েরের সাথে। তখনই মাত্র মুখে পুরেছেন আগুন পান। খানিকটা সময় নিয়ে তিনি জানান, মূলত আগুন পান খাওয়াটা নিছক কৌতুহল থেকেই। তবে পানের নানাবিধ মশলারা আগুনের প্রভাবে যখন উষ্ণ হয়ে ওঠে। একটা স্মোকি ফ্লেভারও কাজ করে। স্বাদের পাশাপাশি মুখের ভেতর বেশ আরাম লাগে। নতুনদের জন্য এটা একটা রুদ্ধশ্বাস অভিজ্ঞতা। নাজিমুদ্দীন রোডের হুসনি দালান সংলগ্ন পানদোকানি আরাফাত জানান, মূলত শৌখিন লোকেরাই আগুন পানে আগ্রহ বোধ করেন। তবে ইন্টারনেটের কল্যাণে সবাই জানতে পারায় অনেকে কৌতুহল বশতও ঢুঁ দেয় তার দোকানে।

তবে এছাড়াও রয়েছে নবাবী পান, লাভার পান, শাহী পান, কাশ্মীরি পান, জামাই-বউ পান, বেনারসি পান সহ অন্তত পনেরো ধরণের পান। আগুন পান ৪০-৫০ টাকায় বিক্রী হয়। এটাই বিক্রী হয় বেশি বলে জানান দোকানি।

আগুন জ্বালাতে পানে দেয়া হয় গ্লিসারিন পার পটাশিয়াম। এ বিষয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রফিকুল হক জানান, শখের বশে এ পান খেলেও সেটা নিয়মিত খাওয়া উচিত নয় কখনোই। এতে করে বাইরে থেকে দেহে যে কোন রাসায়ানিক পদার্থ বহুলাংশে গেলে বা নিয়মিত গেলে খাদ্যনালীতে জটিলতা দেখা দেয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। শেষমেষ সব শঙ্কা পেরিয়ে রসনা বিলাসে বাঙালি অগ্রগামী ভূমিকা থাকবেই। আর তারই হাত ধরে থেকে যাবে পুরান ঢাকার আগুন পান।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement