১৯ মে, ২০২৪, রবিবার

পরিবহণ ধর্মঘটে আমদানি রপ্তানিতে ক্ষতি শতকোটি টাকা

Advertisement

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশব্যাপী পরিবহণ ধর্মঘটের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। গত দুদিনের ধর্মঘটে পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য খালাস হয়নি। একইভাবে বিপুল পরিমাণ রপ্তানি পণ্য আটকা পড়েছে বেসরকারি আইসিডিগুলোতে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতি হয়েছে প্রায় শতকোটি টাকার।

শুধু টাকার অঙ্ক দিয়ে এই ক্ষতি পরিমাপ করা সম্ভব নয় জানিয়ে আমদারি-রপ্তানি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বন্দরের কাজ কোনো কারণে একদিন ব্যাহত হলে তার জের টানতে হয় অনেক দিন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্রেতাদের কাছে রপ্তানি পণ্য পৌঁছাতে না পারলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এবং পরে অর্ডার বাতিল এবং পুনরায় অর্ডার না পাওয়ার শঙ্কা থাকে। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সাপ্লাই চেন ব্যাহত হওয়ায় শিল্প-কারখানায় কাঁচামাল সংকট এবং বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। তাই ক্ষতির জের বহন করতে হয় দীর্ঘদিন।

বন্দর সূত্র জানায়, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি না চলার কারণে বন্দর থেকে শুক্রবার কিছু পণ্য ডেলিভারি হলেও শনিবার হয়নি বললেই চলে। একইভাবে রপ্তানি পণ্য বন্দরে নেওয়া যাচ্ছে না। পণ্য বহনকারী কোনো গাড়ি বন্দরে প্রবেশ করছে না। বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে বেরও হচ্ছে না। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে বন্দরে কনটেইনার জট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গাড়ির অভাবে বেসরকারি আইসিডি থেকে রপ্তানি পণ্য বন্দরে পাঠানো যাচ্ছে না। ফলে আইসিডিগুলোতে রপ্তানি পণ্য আটকা পড়েছে। বেসরকারি আইসিডিগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের শতভাগ রপ্তানি পণ্য এবং ২০ শতাংশ আমদানি পণ্য হ্যান্ডলিং করে থাকে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পণ্যবাহী গাড়ি না চলায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য ডেলিভারি হচ্ছে না। জেটিতে জাহাজ থেকে আমদানি পণ্য খালাস স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রপ্তানিতে। বেসরকারি আইসিডি থেকে রপ্তানি পণ্য বন্দরে আসছে না। আগে যেসব পণ্য বন্দরে ছিল, সেগুলো জাহাজে তোলা হয়েছে। নতুন করে রপ্তানি পণ্য না আসায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। রপ্তানি পণ্য বহনকারী কয়েকটি জাহাজ জেটিতে অলস বসে আছে।’

তিনি বলেন, ‘আজ রোববার তিনটি ফিডার জাহাজ রপ্তানি পণ্য নিয়ে কলম্বোর উদ্দেশে বন্দর ছাড়ার কথা। এই তিন জাহাজকে হয়তো কম কনটেইনার নিয়ে বন্দর ত্যাগ করতে হতে পারে। এ ছাড়া আমদানি পণ্য ডেলিভারি না হওয়ায় বন্দরের কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এতে দেখা দিতে পারে কনটেইনার জট। এটা আমাদের চিন্তার বড় একটি কারণ।’

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন শিকদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘১৯টি বেসরকারি আইসিডি থেকে শনিবার কোনো রপ্তানি পণ্য বন্দরে পাঠানো যায়নি। সাধারণত প্রতিদিন রপ্তানি পণ্যবোঝাই দুই হাজারের বেশি কনটেইনার জাহাজীকরণের জন্য বন্দরে পাঠানো হয়। কিন্তু কোনো রপ্তানি কনটেইনার পাঠানো যাচ্ছে না। এগুলো আইসিডিতে রয়ে গেছে। গতকাল বন্দর থেকে দুটি রপ্তানি পণ্যের জাহাজ ছেড়েছে।

এগুলোতে কনটেইনারের তেমন সংকট হয়নি। আজ সকালে তিনটি জাহাজ ছাড়ার কথা। সকালের মধ্যে যদি আমরা কনটেইনার বন্দরে পৌঁছাতে না পারি তাহলে এই তিন জাহাজকে বিপুলসংখ্যক কনটেইনার না নিয়ে চলে যেতে হবে। অথবা এগুলোর যাত্রা বাতিলও হতে পারে। ধর্মঘটের কারণে আমদানি পণ্য এবং খালি কনটেইনারও আইসিডিতে আসেনি। ফলে আগামী কয়েক দিন খালি কনটেইনারের সংকট দেখা দিতে পারে। খালি কনটেইনার না পেলে রপ্তানি পণ্য বোঝাই করা যায় না।’

এদিকে গত দুদিন ধরে বন্দর থেকে পণ্য পরিবহণ ব্যাহত হচ্ছে। এতে রপ্তানি পণ্য নিয়ে সংকট দেখা দেওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে বিপুল ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

তৈরি পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের প্রায় ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক শিল্পের। তাই ধর্মঘটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই শিল্প। আইসিডি থেকে নির্দিষ্ট সময়ে বন্দরে রপ্তানি পণ্য পৌঁছাতে না পারায় নির্ধারিত জাহাজ ধরা যাবে না। এসব পণ্য পরের জাহাজে পাঠাতে গেলে আরও তিন-চার দিন সময় লাগবে। যথাসময়ে ফিডার জাহাজে পণ্য উঠাতে না পারলে কলম্বো ও সিঙ্গাপুরের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে মাদার ভেসেল ধরা যায় না। তাই বায়ারের কাছে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য পৌঁছানো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। একবার শিপমেন্ট বাতিল বা দেরি হলে বায়ার পণ্য গ্রহণ করতে চায় না। সব অর্ডার বাতিল করে দেয়। এতে লোকসান গুনতে হয়। এ ছাড়া ক্ষুণ্ন হয় দেশের ভাবমূর্তি।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement