ঈদে নতুন পোশাকের সঙ্গে নতুন জুতা যেন অপরিহার্য। সবকিছু কেনার পর মানানসই জুতা বা স্যান্ডেল নিয়েই পূর্ণতা পায় ঈদ ফ্যাশন। জুতা-স্যান্ডেলের ক্ষেত্রে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে ক্রয় করতে পছন্দ করেন অনেকেই।
কালো, চকলেট, অ্যান্টিক, সোনালি, রুপালি, মেরুন, টার্কোয়েজ, সাদা, বেইজ, বেনসন কালারের জুতা-স্যান্ডেলই এ সময়ের ফ্যাশন-সচেতনদের বেশি পছন্দের। করোনা মহামারির বিগত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে জুতা-স্যান্ডেলের বাজার আগের ঈদ উৎসবের মতো চাঙ্গা হবে এমনটাই প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের। তবে করোনার ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেও কাঙ্ক্ষিত বিক্রি হচ্ছে না বলে দাবি করছেন বিক্রেতারা।
অনেকে আবার করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কাঁচামালের দাম ও সরবরাহ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় জুতার দাম বৃদ্ধিকেও বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ হিসাবে দেখছেন। তাদের হিসাবে গত বছরের তুলনায় বিভিন্ন কারণে জুতার দাম বেড়েছে ৫ শতাংশের মতো।
রাজধানীর মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন এলাকার ভাইব্রেন্ট, বাটা, এপেক্স, বলিং, বেসহ বিভিন্ন জুতার দোকান ঘুরে বিক্রেতাদের কণ্ঠে এমন সুর পাওয়া গেছে। শোরুমগুলোতে স্ক্র্যাচকার্ড, ক্রেডিট কার্ড, জিপি স্টার, নগদ ও বিকাশ অফারে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ছাড়ের অফার রয়েছে। তারপরও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কায় বিক্রেতারা।
ইউএস-বাংলা ফুটওয়্যার এর স্বনামধন্য ব্র্যান্ড ভাইব্রেন্ট ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম। ভাইব্রেন্টের যাত্রা শুরুর পর থেকে গ্রাহকদের চাহিদা, আধুনিকতা ও সব শ্রেণির মানুষের বিবেচনায় ৮০০ মডেলের জুতার কালেকশন রাখছে শো-রুমগুলোতে। নারী, পুরুষ ও শিশুদের জন্য জুতা-স্যান্ডেলের পাশাপাশি ভাইব্রেন্ট ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ডিজাইনের লেদার সামগ্রী, ট্রাভেল ব্যাগ, পুরুষ গ্রাহকদের জন্য শার্ট, টি-শার্টসহ অন্যান্য লাইফ স্টাইল সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে তাদের শোরুমগুলোতে।
সারাদেশে ভাইব্রেন্টের ২২টি শাখা রয়েছে। রামপুরা হাজিপাড়ার ভাইব্রেন্টের শো-রুম ইনচার্জ খলিলুর রহমান ঈদের বিক্রি নিয়ে বলেন, করোনা মহামারির প্রকোপ কাটিয়ে বিক্রি বেশ ভালো। তবে ঈদ হিসাবে আমাদের প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হবে কি না সন্দেহ রয়েছে। আমাদের এই শোরুমের ঈদ উপলক্ষে বিক্রির টার্গেট ৩৬ লাখের মতো, এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশের মতো পূরণ করতে পেরেছি। ঈদের মাত্র কয়েকদিন বাকি, টার্গেট অনুসারে বিক্রি হবে কি না সন্দেহ আছে।
এবারের ঈদের চাহিদার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের ঈদে বাচ্চাদের আইটেম বেশি চলছে। এরপরেই নারীদের জুতা-স্যান্ডেল। পাশাপাশি আমাদের পোশাকের আইটেমগুলোও বেশ ভালো চলছে। সন্ধ্যার পর মূলত ক্রেতা সমাগম বেশি হয়ে থাকে।
সারাদেশে বহুজাতিক কোম্পানি বাটার ২৩৮টি শোরুম রয়েছে। রাজধানীর বসুন্ধরায় বাটার সবচেয়ে বড় শোরুম। এখানে বাড্ডা থেকে জুতা ক্রয় করতে এসেছেন সাকিব। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাটার পণ্য ব্যবহার করছি। ডিজাইনের ধরন আগের চেয়ে বেড়েছে। পরিবারের জন্য পোশাক কিনে, নিজের জন্য একটি জুতা কিনতে এলাম। ঈদ উপলক্ষে এখানে ভিড় অন্যান্য শোরুমের তুলনায় বেশি। দাম ও মানের হিসাব মিলাতে পারছি না।
বাটার একটি শোরুমের বিক্রেতা আবদুর রহিম সার্বিক বিষয়ে বলেন, বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্কে আমাদের সবচেয়ে বড় শো-রুম। সেখানে ঈদ উপলক্ষে প্রতিটি শোরুমে প্রতিদিন ৫০ লাখ থেকে কোটি টাকার বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা থাকে। অন্যদিকে ছোট ছোট শোরুমে ঈদের মাসে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা থাকে। যতটুকু জানি এখন পর্যন্ত অধিকাংশ শোরুমে লক্ষ্যমাত্রার ৭০-৭৫ শতাংশ বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। তবে করোনার প্রকোপ এখনও রয়েছে, অন্তত বিক্রির হিসেব তাই বলছে। সাধারণত এই সময়েই আমরা টার্গেট পূরণ করে ফেলি।
একই বক্তব্য পাওয়া গেল জুতা-স্যান্ডেলের ব্র্যান্ড বে, এপেক্স কিংবা বলিংয়ের বিক্রেতাদের কাছ থেকেও। সারাদেশে বে-এর ৭৮টি শোরুম। রামপুরার বে’র শোরুম ইনচার্জ এমডি রুবেল হতাশার সুরে বলেন, ঈদের মাত্র কয়েকদিন বাকি। এখনও লক্ষ্যমাত্রা ৫০ শতাংশ অর্জিত হয়নি। ক্রেতা অনেকটাই কম। এটা শুধু আমাদের নয়, অন্যান্য ব্র্যান্ডের শোরুমে বিক্রির একই চেহার দেখতে পাবেন। করোনা কমে যাওয়ার কারণে আমাদের ধারণা ছিল এই ঈদে ভালো বিক্রি হবে, বিগত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব। বিক্রি আগের চেয়ে ভালো হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না।
অন্যদিকে বলিং এর বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, রামজানের একবারেই শেষে দিকে আমরা। কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এখন পর্যন্ত ২৮ লাখের মতো বিক্রি করেছি। টার্গেটের কাছাকাছিও যেতে পারব না বলে মনে হচ্ছে। আমাদের স্ক্র্যাচকার্ড, ক্রেডিট কার্ড, জিপি স্টার ও বিকাশ অফারে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ছাড়ের অফার রয়েছে।
