১৯ মে, ২০২৪, রবিবার

এক পিঁড়িতে দুই কন্যার বিয়ে

Advertisement

এক পিঁড়িতে দুই কন্যার বিয়ে। বধূ সেজে অপেক্ষা করছিলেন কনে অন্তরা বেগম ফজিলা (৩৩) ও শিরিনা খাতুন (৩৩)। বরযাত্রী নিয়ে এলেন দুই বর। সদর দরজায় আগে থেকেই ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছিল কনেপক্ষ। বর আসতেই ঝরে পড়ল ফুলের পাপড়ি। এরপর শরবত পান করিয়ে বর-বরণ। একে একে চলল বিয়ের নানা আনুষ্ঠানিকতা।

বিয়েবাড়িতে দাওয়াতে এলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও, ম্যাজিস্ট্রেট, সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। অতিথি আপ্যায়নের প্যান্ডেলে আয়োজকদের ছোটাছুটি, পেছন দিকে বাবুর্চিদের ব্যস্ততা, দৌড়ঝাঁপ, হাঁকডাক। যথারীতি সময় এল কনে বিদায়ের। বিদায়বেলায় কেঁদে ভাসালেন কনেরা। তারা যেন বাবার সংসার ছেড়ে যাচ্ছেন। আদতে সেফহোম হলেও কনে অন্তরা বেগম ও শিরিনা খাতুনের বাবার বাড়ি হয়ে উঠেছিল এটি।

আদালতের মাধ্যমে ২০১০ সালে এই দুজন রাজশাহীর বায়ায় অবস্থিত মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসনে (সেফ হোম) আসেন। পিতৃহীন এই দুই নারীর এখানেই কেটে যায় ১১ বছর। শুক্রবার তারা স্বামীর হাত ধরে হোমের বাইরে বেরিয়েছেন। সবার দোয়া সঙ্গে নিয়ে পা রেখেছেন নতুন জীবনে।

শিরিন খাতুনের বর পবার পিল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন (৫০)। তিনি রাজশাহী নগরীতে অটোরিকশা চালান। তিন বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান। বিয়েতে দেনমোহর এক লাখ টাকা। এক হাজার টাকা নগদে বিয়ে পড়ানো হয়েছে। বিয়েতে বরযাত্রী হয়ে এসেছিলেন ইসমাইল হোসেনের দুই পুত্রবধূ জয়া বেগম ও দিলরুবা বেগম। সঙ্গে এসেছিল নাতি-নাতনিরাও। শ্বশুরের বিয়েতে এসে খুশি জয়া বেগম। তিনি বলেন, শ্বশুরের বিয়ের জন্য এমন ভালো একটা মেয়ে পেয়ে তারা খুবই খুশি।

অন্যদিকে অন্তরা বেগমকে বিয়ে করেছেন নগরীর বড় বনগ্রাম দুরুলের মোড় এলাকার বাসিন্দা মো. বিপ্লব (৪২)। তার বিয়ের দেনমোহর দুই লাখ টাকা। এর মধ্যে নগদ এক হাজার টাকায় বিয়ে পড়ানো হয়েছে। বর বিপ্লবের গরু-ছাগলের ব্যবসা রয়েছে। ১২ বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। বাবার বিয়ের বরযাত্রী হয়ে এসেছে তারা। স্বামীর সন্তানদের নিজের সন্তানের মতোই আগলে রাখার প্রত্যাশা অন্তরা বেগমের। সেফাহোমের উপতত্ত্বাবধায়ক লাইজু রাজ্জাক জানান, রংপুর আদালতের মাধ্যমে ২০১০ সালে সেফহোমে এসেছিলেন শিরিন খাতুন। একই বছর অন্তরা বেগমকে সেফহোমে পাঠান পঞ্চগড় আদালত। ঠিকানা বলতে না পারায় তাদের পরিবারে পাঠানো সম্ভব হয়নি।

এখানে তাদের কেটে গেছে ১১ বছর। তাদের বয়স এখন প্রায় ৩৩ বছর। তাদের বয়সও বেড়ে যাচ্ছে। এই বিবেচনায় বিয়ের জন্য এলাকায় ঘটক পাঠান। পেয়ে যান দুজন পাত্র। দেখাশোনার পর অন্তরা ও শিরিনা তাদের বরকে পছন্দ করে বিয়ে করতে রাজি হন। লাইজু রাজ্জাক আরও জানান, অন্তরা বেগম ও শিরিন খাতুনের বিয়ে ঠিক হওয়ার পর বিষয়টি তিনি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং কমিটির সভায় তোলেন। কমিটির সভাপতি রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিয়ের ব্যবস্থা করার অনুমতি দেন। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে মাসখানেক সময় লেগে যায়। তারপর শুরু  হয় ঘটা করে বিয়ের আয়োজন।

জামাই আদরের কোনো কমতিই রাখেননি সেফাহোমের উপতত্ত্বাবধায়ক। দুই মেয়ের বিদায়বেলায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। তারা নিজের সংসারে সুখে থাকবেন— এটাই তার আনন্দ। সেফহোমের ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, শিরিনা খাতুন ও অন্তরা বেগম পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। বিয়েতে নিজেরা খুশি বলে জানিয়েছেন তারা। অভিভাবকহীন দুই নারীর বিয়ে দিতে পারাটাও আমাদের কাছে আনন্দের।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement