১৮ মে, ২০২৪, শনিবার

গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য মূল্যবৃদ্ধিতে শিল্প খাতে নেতিবাচক ধাক্কা

Advertisement

বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে শিল্পের জন্য দেওয়া গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য অসহনীয়ভাবে বাড়ানোর ফলে শিল্প ও উৎপাদন খাতে নেতিবাচক ধাক্কা আসার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা মনে করছেন, সরকার একদিকে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ করতে পারছে না। অন্যদিকে দিন দিন অসহনীয় পর্যায়ে মূল্য বাড়ানো হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না করে লাগামহীন এই মূল্য বাড়ানোর ফলে দেশের শিল্প-কারখানা ঝুঁকিতে পড়বে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারিয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রপ্তানিতে।

সম্প্রতি বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর ফলে শিল্প ও অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাবের বিষয়ে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদরা এই আশঙ্কার কথা জানান।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় গত সোমবার বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে। গতকাল বুধবার থেকে এই মূল্য কার্যকর হয়। এদিকে গ্যাসেরও নতুন মূল্য কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। গ্যাসের মূল্য ৮২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল গত ১৮ জানুয়ারি।

নতুন ঘোষণায় ফেব্রুয়ারি মাসেও

আবাসিক ও শিল্প-কলকারখানায় বিদ্যুতের মূল্য বাড়ছে অন্তত ৫ শতাংশ। আর পাইকারিতে বিতরণ কম্পানিগুলোর জন্য বিদ্যুতের মূল্য বাড়ছে অন্তত ৮ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘শিল্প খাতের গ্যাসের মূল্য অতিমাত্রায় বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে কারখানা সচল রাখাটাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।’

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারের কাছে গ্যাসের মূল্য না বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও সাড়া নেই। এদিকে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জ্বালানির মূল্য প্রতিদিন সমন্বয় করার কথা বলছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসায়ীদের পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। একই সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হবে।

মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, শিল্পের জ্বালানি প্রায় শতভাগ আমদানিনির্ভর। এদিকে দেশে ডলার সংকট চলছে। এতে আমদানি-রপ্তানিতে ডলারের দর নির্ধারণে বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এফবিসিসিআইসহ শিল্পোদ্যেক্তারা মূল্য পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। এতে ক্যাপটিভ মূল্য পাওয়ারে সর্বোচ্চ ৫৭ শতাংশের বেশি না বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি বন্ধের পাশাপাশি জ্বালানি তেল আমদানি কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এতে গত বছরের মাঝামাঝি সময় শিল্প-কারখানায় গ্যাসের সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। ফলে বেড়ে যায় বিদ্যুতের লোডশেডিং। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। এ সংকটের মধ্যে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর ধাক্কা অর্থনীতিতে ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্য যখন বাড়ে, তখন উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর প্রভাব এখনো আছে; সামনে আরো বাড়বে। ২০২৩ সালে এর প্রতিফল আমরা পাব। এতে আমাদের উৎপাদন খরচ বাড়বে। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়বে।

তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মো. ফারুক হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তৈরি পোশাকশিল্প বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এরই মধ্যে এই খাত কাঁচামাল সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রভৃতি চাপের মধ্যে রয়েছে। এই মুহূর্তে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হলে তা পোশাকশিল্পের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলবে। কারণ এতে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। ফলে শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস পাবে।’

পরিস্থিতি বিবেচনা করে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য না বাড়াতে সরকারকে আহ্বান জানান বিজিএমইএ সহসভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজিম। তিনি বলেন, কারখানায় হাজার হাজার শ্রমিক। কাজ নেই। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হয়। এই অবস্থায় শিল্পের গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ৪০ শতাংশ উৎপাদন খরচ বাড়বে। তিনি বলেন, শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের জন্য উদ্যেক্তারা স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনলে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব করেন শিল্পোদ্যোক্তারা। কিন্তু এখন এলএনজি না এলেও ১৭৯ শতাংশ মূল্য বাড়িয়েছে গ্যাসের। এদিকে গত এক বছরে ২০৭টি কারখানা বন্ধ হয়েছে করোনার প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা না থাকার ফলে। তাই একসঙ্গে না বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হলে শিল্পেও সহনশীল হতো। অন্যদিকে ক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্যমূল্য বাড়ানো সহজ হতো।

বস্ত্র খাতের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, দেশে এই মুহূর্তে গ্যাস নেই। অন্যদিকে মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। এটা কোনো যৌক্তিক পর্যায়ে পড়ে না। নিরবছিন্ন সরবরাহব্যবস্থা নিশ্চিত করে তার পর গ্যাস-বিদ্যুেতর মূল্য বাড়ানোর দাবি জানান তিনি। এ ছাড়া এই মূল্যবৃদ্ধি (বিলম্ব করার মাধমে) আগামী এপ্রিল থেকে কার্যকর করার প্রস্তাব করেছেন তিনি।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement