১০ মে, ২০২৪, শুক্রবার

ঘূর্ণি জড় ‘অশনি’ তরমুজে ক্ষতি বাড়িয়ে দিল 

Advertisement

হঠাৎ তরমুজের ব্যাপক দরপতন। তার ওপর ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাব। এ কারণে একসঙ্গে খেতের তরমুজ তুলে ফেলেছেন চাষিরা। কিন্তু ক্রেতা নেই। দুইয়ে মিলে খুলনার দাকোপ উপজেলার তরমুজচাষিদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ। কারণ, তাঁরা এখনো খেতের তরমুজ বিক্রি শেষ করতে পারেননি। সে জন্য অনেক চাষিই তরমুজ চাষে যে টাকা খরচ হয়েছে, তা তুলতে পারা না পারার বিষয়টি ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।

খুলনার দাকোপ উপজেলা সুস্বাদু তরমুজের জন্য বিখ্যাত। তরমুজচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মৌসুমে লাভ হওয়ায় এবারে তাঁরা দ্বিগুণ জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন। এখনো প্রায় অর্ধেক জমিতে তরমুজ রয়েছে। অবশ্য স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, ৭৫ শতাংশ জমির তরমুজ উঠে গেছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এই উপজেলায় ৭ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। মাঘ মাসের শেষ দিক থেকে ফাল্গুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তরমুজের বীজ লাগানো হয়। কিন্তু এ বছর সে সময় অধিকাংশ জমিতে কাদা থাকায় কিছুদিন দেরিতে আবাদ শুরু করেন কৃষকেরা।

চাষিরা বলছেন, গত সপ্তাহে খুলনা শহরের স্টেশন রোড কদমতলা পাইকারি আড়তে প্রচুর তরমুজের ট্রাক ঢুকতে দেখা গেছে। কিন্তু দাম পড়তি। একে তো দাম কম, এর ওপর রয়েছে ক্রেতাসংকট। এতে আড়তের ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা হতাশ। গত সপ্তাহে আট থেকে দশ কেজি ওজনের একেকটি তরমুজ ৯০ টাকা ও ছয়–সাত কেজির তরমুজ ৭০ টাকা দামে বিক্রি হয়।

খুলনা শহরের পাইকারি আড়তের লাকি ট্রেডার্সে দাকোপের খেজুরিয়া গ্রাম থেকে তরমুজ নিয়ে আসা কৃষক সুপ্রভাত মণ্ডল প্রথম আলোকে জানান, এ বছর তিনি প্রতি বিঘা ১৫ হাজার করে ৭৫ হাজার টাকায় পাঁচ বিঘা জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করেছেন। পাশাপাশি বীজ, সার ও কীটনাশক মিলিয়ে প্রতি বিঘায় ৩২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বাজারে ক্রেতাসংকট ও দাম পড়ে যাওয়ায় খরচ উঠবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

দাকোপের রামনগর গ্রামের চাষি নভেন্দু গাইন গত বছর দেড় বিঘা জমির তরমুজ বিক্রি করে প্রায় দুই লাখ টাকা আয় করেছিলেন। তাই এবার পাঁচ বিঘায় তরমুজের আবাদ করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারের যা অবস্থা, তাতে টাকা উঠবে না জানি। দাম শুনে হাসব না কাঁদব তা বুঝতে পারছি না। সার ও কীটনাশক দোকানের টাকা বাকি। খেতে থাকা তরমুজের কী হবে জানি না। আসলে কপালে মারলে ঠেকায় কে?’

কৃষকেরা জানান, ঘূর্ণিঝড় অশনির খবর শুনে খেত থেকে অনেকে তরমুজ তুলে ফেলেন। স্থানীয়ভাবে ক্রেতা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে তাই নিজেরাই খুলনা, যশোর, রাজশাহী, ঢাকা ও কুমিল্লার আড়তে তরমুজ নিয়ে যাচ্ছেন। তবে কোথাও কেউ ভালো দাম পাচ্ছেন না।

কালিকাবাটি গ্রামের কৃষক জয়ন্ত সরদার বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থায়। কারণ, দাকোপ তিনটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে গঠিত। শহরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই। দুটি ফেরি পার হয়ে তবেই খুলনায় যেতে হয়। এতে পরিবহন খরচ বেশি হয়।’

গত সপ্তাহে দাকোপের ২৩ জন তরমুজচাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার তরমুজ চাষ করে তাঁরা কয়েকটি কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রথমত, চাষ শুরু হয় দেরিতে। দ্বিতীয়ত, এলাকায় বড় ট্রাক ঢুকতে না দেওয়ায় পাইকারেরা সেভাবে আসেননি। তৃতীয়ত, খেতে আসা ক্রেতারা দাম কম বলায় অনেক কৃষক তরমুজ বিক্রি করেননি। তাঁরা বেশি দাম পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। চতুর্থত, কিছু পাইকার মাঠে এসে অগ্রিম ৫-১০ হাজার টাকা দিয়ে গেলেও পরে আর আসেননি, তরমুজও নেননি। পঞ্চমত, ঈদের পরের কয়েক দিন আড়তে তেমন কেনাবেচা হয়নি।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, ‘দাকোপের কিছু জায়গায় বেড়িবাঁধ ভাঙা। ওই সব জায়গায় আমরা যদি বড় পরিবহন চলাচলের অনুমতি দিতাম, তাহলে রাস্তা ভেঙে গিয়ে পুরো পরিবহনব্যবস্থাই ব্যাহত হতো। সে জন্য সবাইকে নিয়ে অনুষ্ঠিত মিটিংয়ে বড় গাড়ি না ঢোকানোর সিদ্ধান্ত হয়।’

মেহেদী হাসান খান আরও বলেন, অনেক জায়গায় আম চলে এসেছে। এ জন্য তরমুজের চাহিদা কমেছে। দামটাও পড়ে গেছে।‘১

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement