২৭ এপ্রিল, ২০২৪, শনিবার

তেলের দাম বাড়ায় সিমেন্টের দাম বেড়েছে ২০–৫০ টাকা

Advertisement

গত শুক্রবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর গত তিন দিনে কোম্পানিভেদে সিমেন্টের দাম প্রতি বস্তায় ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন পণ্যের দামে। গত শুক্রবার ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রলের দাম সর্বনিম্ন ৩৪ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৬ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। আর তাতেই গত ৩ দিনে সিমেন্টের দাম বেড়েছে প্রতি বস্তায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। গত তিন দিনে সিমেন্ট খাতের বেশির ভাগ কোম্পানিই দাম বাড়িয়েছে। আর কেউ কেউ তেলের দাম বাড়ার আগে গত সপ্তাহেই দাম বাড়িয়েছিল। সিমেন্ট খাতের একাধিক কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

কোম্পানিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাঁচামাল আমদানিতে খরচ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। তার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাড়তি জ্বালানি খরচ। এ কারণে কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে দাম সমন্বয় করতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে আরও দাম সমন্বয় করতে হবে বলে জানান কোম্পানিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। একসঙ্গে বেশি দাম বাড়ালে হঠাৎ করে বিক্রি অনেক কমে যেতে পারে, এ শঙ্কায় ধীরে ধীরে দাম সমন্বয়ের পথে হাঁটছে কোম্পানিগুলো।

একাধিক কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা পর্যায়ে এখন ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম কোম্পানিভেদে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪০ থেকে ৫৫০ টাকা। ১৫ দিন আগেও এ দাম ছিল ৪৯০ থেকে ৫০০ টাকা।

সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির (বিসিএমএ) সভাপতি মো. আলমগীর কবির বলেন, গত ৩০ বছরের মধ্যে সিমেন্ট খাত এখন ভয়াবহ এক সংকটের মুখোমুখি। বিশ্ববাজারে কাঁচামাল, পণ্য পরিবহনে জাহাজভাড়া ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাড়তি জ্বালানি খরচ। এত সব সংকটের মধ্যে পড়ে লোকসান কমাতে সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর কেউ কেউ প্রতি বস্তায় ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছে। কারণ, লোকসান কাটাতে মূল্য সমন্বয়ের বিকল্প কোম্পানিগুলোর সামনে নেই।

“গত ৩০ বছরের মধ্যে সিমেন্ট খাত এখন ভয়াবহ এক সংকটের মুখোমুখি। বিশ্ববাজারে কাঁচামাল, পণ্য পরিবহনে জাহাজভাড়া ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাড়তি জ্বালানি খরচ।”
আলমগীর কবির, সভাপতি, বিসিএমএ

সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে সচল সিমেন্ট কারখানা রয়েছে ৩৫টি। চলতি বছরের গত ৭ মাসের গড় হিসাবের ভিত্তিতে সিমেন্টের বাজারের ৮০ শতাংশই ১০ কোম্পানির দখলে। বাকি সব কোম্পানি মিলে বাজার অংশীদারত্ব ২০ শতাংশ।

সিমেন্টের বাজারে আধিপত্যের শীর্ষে রয়েছে শাহ্‌ সিমেন্ট। কোম্পানিটি এককভাবে বাজারের প্রায় ১৪ শতাংশ দখলে রেখেছে। আর দ্বিতীয় অবস্থানে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ সিমেন্ট। এটির বাজার অংশীদারত্ব প্রায় ১০ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সেভেন রিংস ব্র্যান্ডের সিমেন্ট। কোম্পানিটির বাজার অংশীদারত্ব ৯ শতাংশের বেশি।

বাজার অংশীদারত্বে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বসুন্ধরা সিমেন্ট। দেশের সিমেন্টের চাহিদার ৮ শতাংশের বেশি পূরণ করছে কোম্পানিটি। পঞ্চম অবস্থানে প্রিমিয়ার সিমেন্ট। এটির বাজার অংশীদারত্ব প্রায় ৮ শতাংশ। ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে ক্রাউন সিমেন্ট। কোম্পানিটির বাজার অংশীদারত্ব প্রায় পৌনে ৮ শতাংশ। এরপরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট, হাইডেলবার্গ, আকিজ ও আনোয়ার গ্রুপের সিমেন্ট। এসব কোম্পানির বাজার অংশীদারত্ব সোয়া ২ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত।

একাধিক সিমেন্ট কোম্পানি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত বছরের শেষে দেশে সিমেন্টের বাজার ছিল প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার। গত ৫ বছরের ব্যবধানে এ বাজারের আকার বেড়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। ২০১৬ সাল শেষে দেশের সিমেন্টের বাজার ছিল ২০ হাজার কোটি টাকার।

সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির নেতারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে নানামুখী সংকটের কারণে সিমেন্টশিল্পে ক্রান্তিকাল দেখা দিয়েছে। এ কারণে সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল সোয়া ৭ শতাংশের মতো ঋণাত্মক। বৈশ্বিক ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়নকাজ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমে গেছে। তাতে সিমেন্টের বিক্রিও কমেছে।

মেঘনা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনিক সিমেন্টের (ফ্রেশ ও মেঘনাসেম ডিলাক্স ব্র্যান্ড) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, শুধু ডলারের দাম বাড়ার কারণে খরচ বেড়েছে ২৫ শতাংশের মতো। সেই দাম এখন সমন্বয় করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিও ধীরে ধীরে সমন্বয় করা হবে। তা না হলে বেশির ভাগ কোম্পানিই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবে না।

সিমেন্টশিল্পের কাঁচামালের শতভাগই আমদানিনির্ভর। সিমেন্ট তৈরিতে পাঁচ ধরনের কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। কাঁচামাল আমদানির তথ্য দিয়ে সিমেন্ট উৎপাদনের তথ্য পাওয়া যায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৩৫ লাখ টন সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি হয়েছে। কাঁচামালের আমদানি কমলেও খরচ বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১৫৪ কোটি মার্কিন ডলারের কাঁচামাল আমদানি করা হয়েছে। দেশে সিমেন্ট উৎপাদনকারী ৪০টি প্রতিষ্ঠান (একই গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠানসহ) এ কাঁচামাল আমদানি করেছে। কোম্পানিভেদে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানি বাড়লেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেরই আমদানি কমেছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement