১৯ মে, ২০২৪, রবিবার

মহামারিকালে পোশাক রফতানি বাড়াতে বায়লার গবেষণা

Advertisement

দেশের শিল্প মালিকদের সঙ্কা কাটাতে করোনার মধ্যে রিকভারি প্ল্যানের উপর একটি বিস্তর গবেষণা করছে বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইয়াং লিডার্স অ্যাসোসিয়েশন-বায়লা। “রোড টু রিকভারি” শীর্ষক এই গবেষণা কর্মসূচিতে রয়েছে একাধিক ফোকাস গ্রুপ সেশন, ইন্টারভিউ এবং ২৫০ টি পোশাক শিল্পের জরিপ।

মহামারি চলাকালীন বা পরে আরএমজি শিল্পকে কীভাবে উন্নত ও শক্তিশালী করা যায় সে বিষয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করার লক্ষ্যে এই গবেষণাটি সাজিয়েছে বায়লা। তার অংশ হিসেবে ১৫ই আগস্ট, ২০২১ রবিবার পোশাক তৈরি ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান ধরে রাখার ক্ষেত্রে লিড টাইম কমানোর বিষয়ে এক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

“Leading with Lead Times” শীর্ষক এই আলোচনায় বক্তারা তৈরি পোশাক খাতে লিড টাইম কমানোর গুরুত্ব ও কমাতে করনীয় বিষয়ে আলোচনা করেন। সেশানে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর পরিচালক ও টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব, বিকেএমইএর পরিচালক ও বে ক্রিয়েশানসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম আই সিদ্দিক সেলিম মাহবুব, বিটিএমএ’র পরিচালক ও আউটপেস অ্যান্ড আরএ স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রজিব হায়দার। সেশানটি সঞ্চালনা করেন বায়লা ও নিটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক এহসান হক।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, দীর্ঘ চার দশকের চেষ্টায় বিশ্বের তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশ একটি সম্মানজনক অবস্থান অর্জন করেছে। তবে সাম্প্রতিক করোনা মহামারির সময়ে বাংলাদেশের এই অবস্থান হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যেই ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে টপকে তৈরি পোশাক রফতানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। অন্যান্য দেশগুলোও খুব দ্রুতই এগিয়ে চলছে। বলাই বাহুল্য, বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগীতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির সহায়তায় পোশাক তৈরিতে পদ্ধতিগত সময় কমিয়ে আনতে হবে।

বাংলাদেশের এমডিসিতে গ্রাজুয়েশান এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। পরিবর্তিত অর্থনৈতিক বাস্তবতায় আমদানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যিক চুক্তিগুলো ধীরে ধীরে বদলে যাবে। তাই ভবিষ্যতে এই খাতের প্রতিযোগীতামূলক দাম ধরে রাখতে হলে ব্যাপক উদ্ভাবনের বিকল্প নেই। প্রতিটি খাতকে নতুন করে ভাবতে হবে। কমাতে হবে খরচ ও সময়।

এমনই একটি উদ্ভাবনের খাত হচ্ছে লিড টাইম। বর্তমানে পোশাক তৈরিতে ৯০-১২০ দিনের একটি লিড টাইম রয়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহার ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে কীভাবে এই লিড টাইমকে কমিয়ে আনা যায় এবং তাতে সরকার, সংগঠন এবং কোম্পানি লেভেকে কী কী করনীয় তা নিয়েই আলোচনা করেছেন বক্তারা।

সূচনা বক্তব্যে বায়লা ও নিটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক এহসান হক বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশে লিড টাইম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এক্ষেত্রে অনেক এফিশিয়েন্সি বাড়ানোর সুযোগ আছে বলে মনে করে বায়লা। স্যমপ্লিং থেকে শুরু করে শিপিং পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাক্তিগত গাফলতি থেকে সমষ্টিগতভাবে ভুল প্র্যাক্টিস লিড টাইম বাড়িয়ে দেয়। লিড টাইম সৃষ্টিকারী প্রতিটি পয়েন্টকে চিহ্নিত করে সেগুলো কমাতে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও বিকল্প নেই।

বিজিএমইএর পরিচালক ও টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, “আমরা যদি আমাদের বায়ারদের বুঝি এবং আমাদের নিজেদের গবেষণাগুলো ঠিক মতো করি তাহলেই আমরা লিড টাইমকে অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবো। বিশেষ করে আমাদের অফ-ডক এফিশিয়েন্ট নয়। আমাদের অফ-ডকের কর্মীদের অবশ্যই প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে তারা সঠিকভাবে লোড ও অনলোড করতে পারে। আমাদেরকে এফিশিয়েন্সির তুলনামূলক চিত্র দেখার জন্য একটি যথাযথ রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। আমরা এখনও প্রসেস ড্রিভেন সিস্টেম নিয়ে কাজ করি না বরং আমরা পিপল ড্রিভেন সিস্টেম নিয়ে কাজ করি।”

বিকেএমইএর পরিচালক ও বে ক্রিয়েশানসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম আই সিদ্দিক সেলিম মাহবুব বলেন, “ডকে সরঞ্জাম পরিচালনার অদক্ষতার জন্য ২ থেকে ১২ দিনের লিড টাইম তৈরি হয়ে থাকে। দক্ষ কর্মীর অভাব এবং স্ক্যানিং সরঞ্জামের অভাবের কারণে এসব লিড টাইম তৈরি হয়ে থাকে। আমরা যদি এসব সমস্যা সমাধান করতে পারি তাহলে আমরা অন্তত ৫-৭ দিন লিড টাইম কমাতে পারবো।”

তিনি আরও বলেন, “তৈরি পোশাক খাতে আমরা ব্যাপকভাবে আমদানিকৃত কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল। বন্দর কর্তৃপক্ষ নমুনা সংগ্রহে ৩-১০ দিন সময় নিয়ে থাকে। এই সমস্যা সমাধানে বন্দর কর্তৃপক্ষকে নমুনা সংগ্রহ করেই পণ্যকে ছেড়ে দিতে পারে। এতে বন্দর কর্তৃপক্ষ যেমন নিজ সময়ে নমুনা পরীক্ষা করতে পারবে তেমনি আমদানিকারকরাও সময়মত পণ্যের সরবরাহ পাবে। কাস্টমস ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে অটোমেশান অনেকাংশেই অধারাবাহিক, এটিও বন্দরে লিড টাইম বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। সব মিলিয়ে এসব কারণে একটি পণ্যর আমেরিকা পৌঁছাতে ৭০ দিন সময় লেগে যায়।”

বিটিএমএ’র পরিচালক ও আউটপেস অ্যান্ড আরএ স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রজিব হায়দার বলেন, “আমার মতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ফ্যাক্টরিগুলো যেমন স্পিনিং মিল, ওয়েভিং মিল এবং ডাইং মিল লিড টাইমে বড় ভূমিকা পালন করে। প্রধান সমস্যাগুলোর একটি হচ্ছে এসব মিলের প্রায় সব কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। আমাদের তুলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারতসহ অন্যান্য দেশের উপর নির্ভর করতে হয়।

তিনি বলেন, আগে তুলা আমদানিতে সময় লাগত ৪৫ দিন এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০-৭০ দিনে। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে ফিউমিগেশান। এখন যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি কন্টেইনারও থেকে থাকে তাহলে সবগুলোকে ফিউমিগেট করতে হয় (জীবানুমুক্তকরণের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়)। বল ওয়ার্ম থেকে সুরক্ষার জন্য এটি করা হয়ে থাকে। বর্তমানে এটির প্রয়োজন না থাকলেও পুরোনো নিয়মের কারণে এখনও এটি এখনও করা হয়ে থাকে। এর ফলে লিড টাইম তৈরি হয়। যদি লিড টাইম কমানোর বিষয়টিতে মনোযোগ দিতে হয় তাহলে একটি ফ্যাক্টরিতে পর্যাপ্ত কাঁচামালের সরবরাহ থাকতে হবে। এটি সম্ভাব করতে হলে বন্দরে তৈরি পোশাক খাতের জন্য আলাদা একটি টার্মিনাল নির্মান করে দিতে হবে।”

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement