৭ মে, ২০২৪, মঙ্গলবার

মূর্তিমান আতঙ্ক ‘পাঞ্জশির’, কখনো দখল করতে পারেনি কেউ

Advertisement

রাশিয়া ও চীনের আঁকা ছকে মাত্র ১০ দিনের মধ্যে প্রায় বিনা রক্তপাতে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ তালেবানদের হাতে চলে গেলেও এখনও একটি জায়গা দখল করতে পারেনি তারা। বরং সেখানে তারা পরাজিত এমনটাই বলা যায়। সেই জায়গাটি হচ্ছে পাঞ্জশির উপত্যকা। এই অঞ্চলটি আফগানিস্তানের উত্তরে অবস্থিত। পাঞ্জশির প্রদেশ আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের একটি। এতে পাঞ্জশির নদীর উপত্যকা অবস্থিত। রাজধানী শহরের নাম বাজারক।

এই পাঞ্জশির উপত্যক্যা তালেবানের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। তারা দখল তো দূরের কথা- প্রদেশটির দিকে তাকানোরও সাহস পায়না। এমনকি আজ পর্যন্ত সোভিয়েত রাশিয়া থেকে শুরু করে যারাই পাঞ্জশিরে প্রবেশের চেষ্টা করেছে- কেউই প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারেনি। পাঞ্জশির

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে অবস্থিত পাঞ্জশির উপত্যকা। আফগান সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন- ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লাহ মোহাম্মাদী।

তালেবানরা রোববার দেশ দখল করে নেয়ার পর প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে যান। এরপর নিজেকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন সালেহ। এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেন, আমি কখনই এবং কোনও পরিস্থিতিতেই তালেবান সন্ত্রাসীদের সামনে মাথা নত করবো না। আমি কখনও আমার নায়ক কমান্ডার, কিংবদন্তী এবং পথপ্রদর্শক আহমাদ শাহ মাসুদের আত্মা এবং লিগ্যাসির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবো না।

আফগান সামরিক ইতিহাসেও গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রয়েছে পাঞ্জশির উপত্যকার। কারণ ভৌগোলিকভাবে পুরো দেশের সঙ্গে এই এলাকা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। উপত্যকায় প্রবেশের একমাত্র পথ হচ্ছে পাঞ্জশির নদীর সৃষ্টি করা একটি সংকীর্ণ পথ। তাই সামরিকভাবে এই উপত্যকাটি বেশ সুরক্ষিত।পাঞ্জশির

হিন্দুকুশ পর্বতের কোলে অবস্থিত পাঞ্জশির উপত্যকা প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষার জন্য সুপরিচিত। ১৯৯০-র দশকে গৃহযুদ্ধের সময় তালেবানদের হাতেও পতন হয়নি এই অঞ্চলটির। এমনকি সোভিয়েতরাও এই উপত্যকা জয় করতে পারেনি। এই উপত্যকার দেড় লাখ বাসিন্দার অধিকাংশই তাজিক জাতিগোষ্ঠীর। আর বাকিদের মধ্যে অধিকাংশ পশতুন।

পাঞ্জশির এখনো আফগানিস্তানের একমাত্র স্বাধীন এলাকা। পারস্যের ভাষায় ‘পাঞ্জশির’ শব্দের অর্থ হল পঞ্চ ‘শের’ বা পাঁচটি সিংহের সমাহার। এমন প্রদেশের যোদ্ধারা যে সিংহ বিক্রমে শত্রু দমন করত পারেন, তা এলাকার নামই বলে দেয়।

ভয়াবহ ‍সুন্দর পাঞ্জশিরে রয়েছে ৩৪ টি প্রভিন্স বা এলাকা । যারমধ্যে ৫১২ টি গ্রাম রয়েছে। সেখানকার গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকেই তালিবান বিরোধী বাহিনীর যোদ্ধা।

পাঞ্জশিরে এককালে জঙ্গি তালেবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন উপজাতি নেতা আহমেদ শাহ মাসুদ। তাঁর ছেলে আহমেদ মসুদ বর্তমানে নিজের বাহিনী নিয়ে হাত মিলিয়েছেন দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহর সঙ্গে । তাঁরা চাইছেন আফগান সেনারাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিক। পাঞ্জশির

এর আগে, পাঞ্জশিরের আহমেদ শাহ মাসুদ বারবার তালেবানের পথের কাঁটা হওয়ায় তাঁকে ২০০১ সালে খুন করে জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা। এরপরও মাথা নোয়ানি পাঞ্জশির ও আহমেদ শাহ পুত্র আহেমদ মাসুদ। চলছে লড়াই। যার নমুনা দেখিয়েছে আফানিস্তানের এই লড়াকু প্রদেশ।

এই উপত্যকায় প্রচুর পরিমাণে পান্না পাওয়া যায়। তাই ক্ষমতায় থাকাদের বিরুদ্ধে অতীতে লড়াই-সংগ্রামের জন্য অর্থের খুব একটা অভাব হয়নি উপত্যকাটির। তালেবানরা ক্ষমতা দখল করে নেয়ার আগে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন দাবি করেছিল পাঞ্জশির প্রদেশ।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement