৭ মে, ২০২৪, মঙ্গলবার

প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিয়ে মুখ খুলেলেন চঞ্চল চৌধুরী

Advertisement

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবসময় সরব থাকেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। বিভিন্ন সময়ে নানা ইস্যুতে কথা বলেন তিনি। এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার নিয়ে মুখ খুললেন এ অভিনেতা।

নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ঘাড়ে চেপে যখন অবাধে অসামাজিক কার্যকলাপ চলতে থাকে, তখন আমরা অধিকাংশ মানুষই শুধু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করি। এটি এখন আমাদের ব্রেইনের ওপর বিষফোঁড়াসম সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আমরা বাকস্বাধীনতার কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলি, অথচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অধিকাংশ মানুষ স্বেচ্ছাচারীর মতো যা খুশি করছে, যা ইচ্ছে বলছে। প্রশ্নটা এখানেই।

তিনি বলেন, আধুনিকতা আর সমঅধিকারের ঝাণ্ডা তুলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনি কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে অপব্যবহার করছেন না? আপনার অরক্ষিত এই কার্যকলাপে, সমাজ বা নতুন প্রজন্ম কতটুকু প্রভাবিত হচ্ছে, সেটুকু ভাবার অবকাশ কি আপনার আছে। আপনি কি সত্যিই সমাজের জন্য মঙ্গলজনক কিছু করছেন?

পোস্টে তিনি বলেন, ছোটবেলায় পড়তাম বিজ্ঞান “আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?” বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম্যের সঠিক ব্যবহারই হয়তো জাতির জন্য ভালো ভূমিকা রাখতে পারত, কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো রাখেও।

কঠিন সত্য এটাই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বর্তমানে যতটা না সামাজিক কর্মক্ষেত্র, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি ব্যক্তিগত বাণিজ্য ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ফেসবুকে “REEL” নামক একটি বিষয় আছে। এখানে অধিকাংশই যে কতটা অশ্লীল, ভাবতেও অবাক লাগে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব অশ্লীলতার বিরুদ্ধাচরণ করি। সেন্সরবিহীন এসব অশ্লীল কার্যকলাপ কে বন্ধ করবে? এখানে রাষ্ট্রের যথাযথ কর্তৃপক্ষের বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা কি আমরা আশা করতে পারি না? সেই সঙ্গে আপনার বা আমার অসচেতনতা অথবা সমর্থনের ভেতর দিয়ে তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে বিতর্কিত কিছু ভাইরাল ব্যক্তি। সে যখন আপনার কাছে পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব দাবি করবেন, আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন? পারবেন না। কারণ আপনার বালখিল্য আচরণ, উদাসীনতা আর সস্তা বিনোদন প্রিয়তায় আপনি সেই সন্তানকে জন্ম দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আপনার অরক্ষিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারই এর জন্য দায়ী।

চঞ্চল চৌধুরী বলেন, আপনি কি আপনার সন্তানের কথা ভাবেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেন? যদি করেন, তা হলে অবশ্যই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারেও আপনাকেও অনেক দায়িত্বশীল হতে হবে। তথাকথিত কিছু অসৎ রাজনীতিবিদদের কারণে যেমন রাজনীতি কলুষিত, তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনার বা আমার সমর্থনে গজিয়ে ওঠা ভাইরাল ব্যক্তিদের কারণে সংস্কৃতি কলুষিত হচ্ছে। এর জন্য অন্য কেও দায়ী নয়। দায়ী আপনি বা আমি, দায়ী আমাদের নিম্ন মানসিকতা। আপনি কাকে অনুসরণ করবেন বা সমর্থন দেবেন বা কে হবে এই দেশে আপনার রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক আদর্শ, চূড়ান্ত ভাবনার এই সময়টুকুও বোধ করি পেরিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো অবজ্ঞা করার মতো হলেও, আমাদের সন্তানরা ভবিষ্যতে অনুসরণ বা শ্রদ্ধা করার মতো কাউকে পাবে না। পরিচিত হতে হবে আপনার রুচিতে জন্ম দেওয়া কোনো ভাইরাল বিনোদন ব্যক্তির উত্তরসূরি হিসেবে। কারণ আপনি বা আমি ঠিক বেঠিক বা উচিত অনুচিতের পার্থক্য ভুলে সস্তা বিনোদন প্রিয় জাতিতে পরিণত হয়ে গেছি। বুঝতে পারছেন কি সামনে কতটা অন্ধকার?

পোস্টের শেষে তিনি বলেন, চুপ করে থাকা রাজনীতিক, সংস্কৃতিবান এবং রুচিশীলদের বলছি প্রস্তুত থাকুন। আপনাকে যে কোনো উপায়ে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামানো হবে। তাই এখনো সময় আছে মুখ খুলুন, প্রতিবাদ করুন। এই ব্যর্থতা প্রথমত রাষ্ট্রের। দ্বিতীয়ত তথাকথিত সংস্কৃতিকর্মীদের, যাদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল জাতিকে সঠিক পথ দেখানো, সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement