১৮ মে, ২০২৪, শনিবার

বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে মাছের আঁশ

Advertisement

মাছ কাটতে হলে তার আঁশ ফেলতেই হবে। সেই আঁশের ঠিকানা হয় নোংরা-আবর্জনা ফেলার স্থানে। মাত্র দুই যুগ আগেও হয়তো কেউ ভাবেনি এই ফেলে দেওয়া আঁশ বা আঁশটে একদিন বিশ্ব বাজারে বিক্রি হবে! সেই আয় দিয়ে অনেকের সংসার চলবে। কোনো কিছুই যে ফেলনা নয় সেই তত্ত্ব প্রমাণ করেই গুরুত্বের তালিকায় ক্রমেই ওপরের দিকে উঠে আসছে মাছের আঁশ বা আঁশটে। এখন আঁশ সংগ্রহ ও বিক্রি করেই সংসারের বাড়তি আয় হচ্ছে।

অনেকেই এখন বাজার থেকে মাছ কিনে কেটে পিস করে বাসায় আসে। সেখান থেকেই আঁশ চলে যায় ব্যবসায়ীর হাতে। কিন্তু সেই সংখ্যা কম যারা মাছ বাজার থেকে কেটে আনেন। কে-বা এতদিন জানতো এই আঁশটেতে রয়েছে ওষুধ, প্রসাধনী সামগ্রী তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদান। লিপস্টিকে উজ্জ্বলতা প্রদান করে যে উপাদান তা পাওয়ার উৎস এই মাছের আঁশ। যদিও এটি প্রধান উপাদান নয় কিন্তু ব্যবহার তো হচ্ছে। এছাড়াও শৌখিন বিভিন্ন জিনিস তৈরির নকশাতেই মাছের আঁশ ব্যবহার করেন অনেকে।

মহিলাদের গয়না, কানের দুল, গলার মালা প্রভৃতি তৈরি হয় মাছের আঁশ থেকে। তৈরি হচ্ছে মনীষীর মূর্তি। মাছের আঁশ দিয়ে ওষুধের মোড়ক তৈরির কথাও জানা যায়। মাছের দেশ বাংলাদেশে এখন শুধু মাছ নয়, আঁশটেও দামি। বড় বড় বাজারগুলোতে আঁশটে সংগ্রহ করার জন্য পাত্র রেখে আসেন অনেকে। তারপর সেসব সংগ্রহ করে রোদে শুকানো হয়। এখন অনেকেই জানেন এই আঁশ তার বাড়তি আয়ের সহায়ক হতে পরে। ফলে এক সময়ের বর্জ্য এখন অর্থ আয়ের উপাদানে পরিণত হয়েছে। 

সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাছের আঁশের রফতানি মূল্য ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় দুই কোটি ৯৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। পরবর্তী অর্থবছরেই অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫ লাখ দুই হাজার ডলার বা চার কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি আয়ের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ লাখ ৯০ হাজার ডলার বা ২৬ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি আয় বেড়ে ৩০ কোটিতে পৌঁছায়। ক্রমশই মাছের আঁশ অর্থনীতিতে আলো ছড়াচ্ছে। ধীরে ধীরে প্রসার ঘটছে আঁশের। সেই সঙ্গে আসছে বৈদেশিক মুদ্রাও। প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে মাছে-ভাতে বাঙালির দেশের আঁশও বিশ^জয় করবে। কারণ উন্নত দেশগুলোতে মাছের আঁশ বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকার বেশি মাছের আঁশ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। শুধু চীনেই প্রতি বছর প্রায় তিন হাজার টন মাছের আঁশ রপ্তানি হচ্ছে। এটিও এখন একটি শিল্পে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ইন্দোনেশিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। অর্থাৎ এর একটি সম্ভাবনার বাজার তৈরি হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর দেশে মাছের চাহিদা ৩৮ লাখ টন। এর ৪০ শতাংশের বহিরাবরণই আবৃত থাকে আঁশে। কিন্তু সব তো আর সংগ্রহ করা হয় না। কারণ এ বিষয়ে নেই প্রয়োজনীয় সচেতনতা এবং সংগ্রহে নেই উদ্যোগ। সরকারিভাবে এই শিল্পটিকে আরেকটু এগিয়ে নিতে পারলে বেকার সমস্যার সমাধান হওয়ার পাশাপাশি  দেশের অর্থনীতিও লাভবান হতে পারে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement