৫ মে, ২০২৪, রবিবার

ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়েছে সব ধান

Advertisement

মৌলভীবাজারে বোরো ধান ব্রি-২৮ ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েকশত কৃষকের জমির পুরো ধানই নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হওয়া ধান কেউ গরুর জন্য কেটে নিচ্ছেন, কেউ জমিতেই ফেলে রেখেছেন। এতে নিজেদের খোরাকি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

কৃষি বিভাগ বলছে ব্রি-২৮ রোপণে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আর কৃষকরা বলছেন, বাজারে বীজঘরগুলোতে গেলে উচ্চফলনশীল বলে তারা এ ধান তাদের কাছে বিক্রি করে।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল হাইল হাওরের চাষী ইউছুপ মিয়া বলেন, তিনি হাওেরের নিচু অংশে ১৫ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেন। ধান যখন পাকা শুরু করে তখন দেখা যায় জমিনের সকল ধান ছিটা। কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়েও কোন কাজ হয়নি।

তিনি জানান, তার নিজের গ্রাম ইউছুপুর, পাশবর্তী নোয়াগাও, রাজাপুর ও উত্তরভাড়াউা গ্রামের কৃষকের শত শত একর জমির ধানে ছিটা। 

কৃষক জোবায়ের মিয়া তার জমির ধান দেখিয়ে বলেন, ব্রি-২৮ এবার আমাদের সঙ্গে বেইমানী করেছে। ক্ষেতকে ক্ষেত ছিটায় ভরে গেছে। তিনি বলেন, নিজের লোক নেই। রোজ কামলা দিয়ে ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে ১২ কিয়ার জমি চাষ করেছিলেন। সবই শেষ। এবার চাল কিনে খেতে হবে।

নোয়াগাও গ্রামের কৃষক অঞ্জু কর জানান, নিজের জমি নেই। ৭ বিঘা জমি বর্গা চাষ করেছেন। মানুষের কাছ থেকে ঋণ এনে ধান রোপণ করেছেন। এখন পথে বসার উপক্রম।

ইউছুপুর গ্রামের কৃষক শামীম মিয়া জানান, এভাবে  দুর্যোগ আসবে তারা ভাবতেও পারেননি। পুরো ধানের ছাড়ার প্রায় ৯০ ভাগ ধান ছিটা। ১০ ভাগ ভালো থাকলেও কাটানো খরচ দিয়ে তা কাটার চিন্তা করছেন না। অনেকে তা কেটে নিয়ে গরুকে খাওয়াচ্ছেন।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১১ হাজার ৪৫১ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি-২৮ আবাদ হয়েছে ২৬৫১ হেক্টরে। যার মধ্যে বেশ কিছু অংশ ব্লাস্ট রোগে আক্রন্ত হয়েছে। যখন এটি প্রথম ধরা পড়ে তখন পাতা একটু একটু মরতে শুরু করে। তখনই কৃষকদের দুই রাউন্ড ছত্রাক নাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ইউরিয়ার পরিবর্তে পটাশিয়াম সার ব্যবহারের পরামর্শ দেন। 

তিনি আরও বলেন, অনেক কৃষক এই অল্প পাতা মরায় কিছু হবে না ভেবে ছত্রাকনাশক স্পে করেননি। কেউ কেউ এক রাউন্ড করেছেন। কিন্তু যারা প্রপার নিয়ম মেনেছেন তাদের ফসল নষ্ট হয়নি। ব্রি-২৮ অনেক পুরাতন একটি জাত। এটি এখন চাষ করতে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এর পরিবর্তে ব্রি-৮৮ ও ৮৯ চাষের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।

শ্রীমঙ্গল কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রকেন্দ্র শর্মা জানান, তাদের অনুসন্ধান অনুযায়ী ১৬৮ বিঘা জমিতে ব্লাষ্ট রোগে আক্রমণের উপস্থিতি পান। সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের এ থেকে উত্তোরণের পরামর্শ দেন। সে মেতাবেক ১শ’ বিঘার উপরে জমির ধান নষ্ট হয়নি। তবে ৫০ থেকে ৬০ বিঘা জমি নষ্ট হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, মৌলভীবাজারের হাইল হাওর, কাউয়াদিঘি হাওর ও হাকালুকি হাওরের নিচু এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ হেক্টর এলাকায় ব্রি-২৮ জাতের ধান ও ব্রি-৪৮ জাতের ধান নষ্ট হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। তবে এটি মূল উৎপাদনে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেনা। 

তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের সহায়তার জন্য সরকারের কোন বরাদ্দ এলে তারা তা পাবেন।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement