১৯ মে, ২০২৪, রবিবার

ডেঙ্গু মৌসুমে মশার কয়েল উৎপাদনে শুল্ক ছাড় ও প্রণোদনা দাবি উদ্যোক্তাদের

Advertisement

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে দিন দিন দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। অনেককে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। আইসিইউতেও নিতে হচ্ছে কোনো কোনো রোগীকে।

কিছু মানুষ ডেঙ্গুতে মারাও গেছেন বলে দাবি করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে। স্বাস্থ্য অধিদফতর এমন ২০টি মৃত্যুর তথ্য রোগতত্ব নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্র-আইইডিসিআরে পাঠিয়েছে। যদিও আইইডিসিআর সেগুলো এখনো নিশ্চিত করেনি বলে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু ও ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে রোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে আগস্ট মাসেই এই সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এক হাজার ৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আজ পর্যন্ত ৯৬০। দেশের অন্যান্য বিভাগের হাসপাতালগুলোয় ভর্তি আছেন আরও ৮৯ জন রোগী।

এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশে পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি এডিস মশার হাত থেকে বাঁচতে কয়েলের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে মানুষকে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে চলা করোনা মহামারি ও বিধিনিষেধে বিপাকে পড়েছে বৈধ মশার কয়েল প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কারন কাঁচামাল আমদানিতে ব্যয় বাড়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে তাদের।

জানা গেছে, ‘সাধারণত দেশে মশা নিধনে পারমেথ্রিন, বায়োঅ্যালোথ্রিন, ডি-ট্রান্স অ্যালোথ্রিন, টেট্রাথ্রিন, ডেল্ট্রামেথ্রিন, বায়োলেথ্রিন, মেটোফ্লুথ্রিন, সাইপারমেথ্রিন, ইমিপোথ্রিন, ডায়াজনিনসহ আরও কিছু উপাদান বেশি ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে সব ধরনের কেমিক্যালেরই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া কয়েলে ব্যবহৃত নারিকেলের মালা বা খোলসের দামও বেড়ে গেছে। তাই সার্বিকভাবে কয়েলের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু ডেঙ্গু মৌসুমে জরুরি পণ্য হিসেবে স্বীকৃত কয়েলের দাম বাড়াননি উৎপাদকরা।

প্রস্তুতকারকরা বলছেন, সরকার করোনা চিকিৎসা সরঞ্জামে যেমন ছাড় দিয়েছে সেভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধী সামগ্রী উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ পর্যায়ে শুল্ক ছাড় দিলে মানুষ স্বাভাবিক দামেই এসব পণ্য কিনতে পারবেন। একইসঙ্গে শুল্ক ছাড় বা প্রণোদনা দিলে ব্যবসায়ীরাও তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের কয়েলের বাজারের আকার অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা। প্রায় ৩৫০টি ছোট-বড় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ দেড় বছরের করোনা মহামারিতে অন্যান্য শিল্পের মতো বিপর্যস্ত। কয়েল প্রস্তুতকারক ও উদ্যোক্তারা প্রতি বছর সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দিয়ে থাকেন। কিন্তু করোনা মহামারিকালের বাস্তবতায় এখন তারা সরকারের কাছে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

প্রতিষ্ঠিত মশার কয়েল ব্র্যান্ড জোনাকি, রিকো, মার্শাল ও এ এম এর প্রস্তুতকারক কসমো গ্রুপের চেয়ারমান মো. জহির উদ্দিন হায়দার কেটিভি প্রতিদিনকে বলেন, দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মানুষ এই মৌসুমে মশা থেকে বাঁচতে কয়েলের উপর নির্ভর করেন। কিন্তু মহামারির কারনে দীর্ঘ সময় ধরে আমদানি পর্যায়ে কাঁচামাল ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে রয়েছেন। এর পরও তারা সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ অব্যাহত রেখেছেন যাতে বাজারে কোন সঙ্কট তৈরি না হয়। সরকার এক্ষেত্রে জরুরি পণ্য বিবেচনায় শুল্ক ছাড় বা রেয়াত দিলে ব্যবসায়ীরা তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

বাংলাদেশ কয়েল প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুল হামিদ কেটিভি প্রতিদিনকে বলেন, করোনা মহামারির ধকলে অন্যান্য শিল্পখাতের মতো জরুরি পণ্য মশার কয়েল শিল্প মালিকরাও ধুঁকছেন। অন্যান্য খাতের মালিকরা সরকারি প্রণোদনা ও ছাড় পেলেও এই সেক্টরের উদ্যোক্তারা তেমন কিছু পাননি। কিন্তু ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার এই ভরা মৌসুমে তারা উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ অব্যাহত রেখেছেন।

সরকারের কাছে আমাদের বিনীত দাবি- বৈধ কয়েল উৎপাদকদের বাঁচাতে বিশেষ প্রণোদনা এবং শুল্ক ছাড় দেওয়া। আমাদের সমিতির সদস্যরা স্বাভাবিক সময়ে প্রতি বছর সরকারি কোষাগারে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব দেন। এখন তাদের দুঃসময়ে সরকারকেও হাত বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement