১০ মে, ২০২৪, শুক্রবার

যেসব ধাতব পদার্থ তেলের জায়গা দখল করবে!

Advertisement

৮ই মার্চ, ভোর ৫টা ৪২ মিনিট। মাত্র ১৮ মিনিটের ওই সময়টুকুর জন্য সবাই যেন পাগল হয়ে গিয়েছিল। তৈরি হয়েছিল চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা।

বিশ্ববাজারে নিকেলের দাম হঠাৎ ভীষণ দ্রুতগতিতে বাড়তে শুরু করলো। এত দ্রুত যে তা আতংকের সৃষ্টি করলো লন্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জে। খবর বিবিসির।

মাত্র ১৮ মিনিট সময়ের মধ্যে এক টন নিকেলের দাম ১ লাখ ডলার ছাড়িয়ে গেল। এরকম মূল্যবৃদ্ধি আগে কেউ কখনো দেখেনি।

নিকেলের কেনাবেচাই বন্ধ হয়ে গেল এর ফলে। এই রেকর্ড ভঙ্গের আগে থেকেই নিকেলের দাম বাড়ছিল। তার আগের ২৪ ঘন্টায় এই মূল্যবান ধাতুটির দাম বেড়ে গিয়েছিল ২৫০ শতাংশ।

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল – তাতে ধাতব পদার্থের সংকট সৃষ্টির সেটাই ছিল প্রথম ঘটনা।

এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কারণ ছিল দুটি। একটি হচ্ছে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা। দ্বিতীয় কারণ, ভবিষ্যতে হতে পারে এমন কিছু চুক্তি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা।

এর ফলে পরিষ্কার হয়ে যায় যে পৃথিবী এখন ফসিলজাত জ্বালানির ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে চায় না এবং দূষণের মাত্রা কম থাকবে এমন অর্থনীতিতে উত্তরণের ক্ষেত্রে নিকেলের ভূমিকা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পৃথিবীতে তেল ও গ্যাসের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারকদের একটি হচ্ছে রাশিয়া।

তারা এখন পৃথিবীকে – বিশেষত ইউরোপিয়ান দেশগুলোকে – দেখিয়ে দিয়েছে যে তাদের গ্যাসের ওপর অন্য দেশের নির্ভরতাকে যুদ্ধের একটা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব।
ইউক্রেনে রুশ অভিযানের অবসান ঘটাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার ওপর প্রচণ্ড অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে।

গত ৩১শে মার্চ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, আমরা যদি পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ভবিষ্যতকে এমনভাবে গড়ে তুলি যা আমেরিকাতেই তৈরি – তাহলে তা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকে সুরক্ষিত করতে সহায়ক হবে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ভবিষ্যতে যেসব জিনিস আমাদের শক্তি যোগাবে – তার জন্য চীন ও অন্যান্য দেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নির্ভরতার অবসান ঘটাতে হবে।

এর আগে বাইডেন ঘোষণা করেন, তিনি প্রতিরক্ষা উৎপাদন আইন ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে খনিজ পদার্থ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সহায়ক ভুমিকা রাখবেন – যেসব খনিজ বৈদ্যুতিক ব্যাটারি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে মজুত করে রাখার কাজে লাগে।

হোয়াইট হাউস বলেছে, এসব খনিজের মধ্যে আছে লিথিয়াম, নিকেল, গ্রাফাইট, ম্যাঙ্গানিজ এবং কোবাল্ট।

আগামী দিনের অর্থনীতি আরো বেশি বিদ্যুৎভিত্তিক হবে। আর সেই অগ্রযাত্রার বাজারে প্রতিযোগিতার এগিয়ে থাকার জন্য প্রতিটি দেশই ভিন্ন ভিন্ন খনিজের কথা ভাবছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিচ্ছেন – যেসব দেশ আগেকার মত শুধু তেল, গ্যাস বা কয়লা রপ্তানির মধ্যে আটকে থাকবে তারা হয়তো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

যেমন রাশিয়ার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, তাদের অর্থনৈতিক শক্তি প্রধানতঃ ফসিলজাত জ্বালানির মধ্যেই নিহিত। রাশিয়া এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাস উৎপাদনকারী এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ তেল উৎপাদক।
তবে, ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় যেসব ধাতব পদার্থের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা থাকবে – তাতেও কিন্তু রাশিয়ার বেশ কিছু সুবিধা আছে।

রাশিয়া হচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম কোবাল্ট রপ্তানিকারক দেশ। প্লাটিনাম রপ্তানিকারকদের মধ্যেও রাশিয়া পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম, আর নিকেলের ক্ষেত্রে তারা তৃতীয়।

যদিও এক্ষেত্রে রাশিয়া শক্তিশালী অবস্থানে আছে কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব সুপার-মিনারেল খনন-উত্তোলনের মূল কেন্দ্র হচ্ছে অন্য কিছু দেশ।

পৃথিবীতে ব্যবহৃত কোবাল্টের একটা বিরাট অংশ আসে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র বা ডিআরসি থেকে। নিকেল আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে, লিথিয়াম আসে অস্ট্রেলিয়া থেকে, কপার বা তামা আসে চিলি থেকে এবং রেয়ার আর্থ বা বিরল ধাতব পদার্থগুলো আসে চীন থেকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমপক্ষে ১৭টি খনিজ পদার্থ আছে যা বিশ্বের জ্বালানি খাতের নতুন পর্বে উত্তরণের ক্ষেত্রে অতি জরুরি ভুমিকা পালন করবে।

এ কারণে যেসব দেশের হাতে এগুলো উত্তোলন বা প্রক্রিয়াজাত করার সক্ষমতা আছে – তারা বড় রকমের সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা আইইএ-র মতে ১৭টি খনিজ পদার্থের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে লিথিয়াম, নিকেল, কোবাল্ট, কপার, গ্রাফাইট আর রেয়ার আর্থ পর্যায়ের বিরল ধাতুসমূহ।

বৈদ্যুতিক ব্যাটারি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শক্তি মজুত করে রাখার জন্য এসব খনিজ অতি প্রয়োজনীয়। অর্থনীতি যতই বিদ্যুৎ-নির্ভর হবে, ততই নতুন নতুন আরো দেশ সম্পদশালী হবে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক রিসার্চ’এর একজন গবেষক লুকাস বোয়ার বলছেন, এসব খনিজের চাহিদা মেটানোর মতো সরবরাহ না থাকলে এগুলোর দাম হবে আকাশছোঁয়া।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement