৭ মে, ২০২৪, মঙ্গলবার

সব দেশেই আছে হাফ ভাড়া, টালবাহানা শুধু বাংলাদেশে

Advertisement

শিক্ষার্থী, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য হাফ ভাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতে যেমন আছে; তেমনি আছে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন কিংবা নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে। শুধু তাই নয়, মাল্টা-মরিশাসসহ আফ্রিকা-ইউরোপের অনেক দেশেই চালু রয়েছে শিক্ষার্থীবান্ধব এই প্রথা। সমস্যা শুধু বাংলাদেশে।

শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাফ ভাড়ার রেওয়াজ বাংলাদেশেও ছিল, তবে পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের বেপরোয়া আচরণ, মারধর ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারনে এর প্রয়োগ দিন দিন কমছে। বিষয়টা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, হাফ ভাড়ার কথা বললে অনেক ক্ষেত্রেই নিগ্রহের শিকার হতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের। বিষয়টি কার্যকর করতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চমহল থেকে নিয়ম বেধে দেয়া হলেও খোদ তাদের নিয়ন্ত্রিত বিআরটিসি বাসেই লেখা হচ্ছে ‘হাফ পাস নেই।’

শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা আয় রোজগার করেন না। কেউ পরিবারের টাকায়, কেউ টিউশনি আবার কেউ পার্টটাইম জব কিংবা অন্য কোনো উপায়ে টাকা ম্যানেজ করে কোনমতে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার উপরে বেড়েছে শিক্ষা ও আবাসন ব্যয়। মূলত সেই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের  খানিকটা সহযোগিতা করার জন্য হাফ ভাড়ার প্রচলন ঘটে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য, দিন দিন সেটা হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, হাফ ভাড়া দিতে গেলে কখনো শিক্ষার্থীদের অপমান কখনওবা বাস থেকে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে।

সভ্য দেশে শিক্ষার্থী, সিনিয়র সিটিজেন ও শারিরীকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের গণপরিবহনে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও বাংলাদেশে ঘটছে তার উল্টোটা। বিদেশে ছাত্রদের সম্মানের সাথে পরিবহন করলেও দেশে বেপরোয়া পরিবহন শ্রমিকরা ছাত্রদের নির্যাতন নিগ্রহ তো করছেই, সম্প্রতি ছাত্রীদের ধর্ষণের হুমকি দিয়ে দুজন গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডেও গেছেন।

একটি সূত্রের তথ্য, রাজধানীর ২৪৬টি রুটে প্রায় ৮ হাজার বাস চলাচল করে। অথচ এর মধ্যে হাতে গোনা (১০-১২টি) কয়েকটি রুটে হাফ ভাড়ার প্রচলন আছে। বেশির ভাগ বাসের দরজার ওপরে বা পাশেই লেখা হচ্ছে ‘হাফ পাস নাই’, অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ নেই।

বাংলাদেশে হাফ ভাড়ার তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৬৪ সালে বিআরটিসি চারটি বাস দিয়ে সরকারিভাবে গণপরিবহন সেবা দেয়া শুরু করে। তখন থেকে সরকারের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেয়া হতো। কিন্তু এটা ছিল সম্পূর্ণ সরকারি সেবা। পরবর্তীতে যখন সরকারি বাসের সাথে সাথে বেসরকারি বাস গণপরিবহনের সেবা দেয়া শুরু করে। তখন সরকারি বাসের নিয়মে বেসরকারি বাসেও ছাত্রদের হাফ ভাড়া নেয়া হত। কিন্তু এ বিষয়ে যেহেতু কোনও লিখিত নিয়ম নাই। এটা একটা প্রথা হয়ে দাঁড়ায়, যেটা পরবর্তীতে বেশ কিছুদিন চলে। কিন্তু সরকার যেহেতু বেসরকারি বাস কোম্পানির সাথে কোনও চুক্তি করে নাই; সেহেতু এই হাফ ভাড়া নিতে তারা বাধ্য নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ যাত্রীদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি গণপরিবহন সঙ্গে সরকারের যদি চুক্তি থাকত, বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়া ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়াসহ ছাত্রদের হাফ ভাড়া বিষয়ে চুক্তি থাকত; তাহলে ভালো হত এবং এটা নিয়ে এত বেশি তর্ক-বিতর্ক হত না। তাদের ভাষ্য, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বেসরকারি গণপরিবহনের সাথে সরকার চুক্তি করে থাকে। সরকারের চুক্তি এবং লিখিত কোনো আইন না থাকায় হাফ ভাড়ার এই প্রথা ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, বিশ্বের অনেক দেশেই হাফ ভাড়া, বিনা ভাড়ার বিষয়টি চালু রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিনা ভাড়ায় চলাচলের জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রেখেছে ভারতের কর্ণাটক রাজ্য সরকার। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপ-আফ্রিকার অনেক দেশেও এটা চালু রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ট্রান্সপোর্ট অথরিটি শিক্ষার্থীদের জন্য কার্ড চালু করেছে; যা দিয়ে বাস ও ট্রেনে অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারে। দিল্লিতে ১০০ রুপির (১৩০ টাকা প্রায়) কার্ড দিয়ে সাধারণ বাসে সারা মাস যাতায়াত করতে পারে শিক্ষার্থীরা। আর এসি বাসে অন্য যাত্রীদের মাসে এক হাজার ২৭৫ রুপির কার্ড লাগে, ছাত্র-ছাত্রীদের দিতে হয় ২০০ রুপি। ভারতের কেরালা রাজ্যে বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া আট রুপি। এর সঙ্গে বাড়তি এক রুপি দিয়ে ৪০ কিলোমিটার যাতায়াত করতে পারে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে বাসে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের দাবিতে ফের বিক্ষোভ করছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন সাত কলেজের একাধিক ফেসবুক গ্রুপ থেকেও। সরকার বিষয়টির সুরাহা করতে মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করলেও তারা লাখ লাখ শিক্ষার্থীর দাবিকে অগ্রাহ্য করে সরাসরি সরকারকে বলে দিয়েছে তারা হাফ ভাড়া নেবেন না। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন শনিবারের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement