২৬ এপ্রিল, ২০২৪, শুক্রবার

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, লেখক ও সাংবাদিক নূরুল ইসলাম মারা গেছেন

Advertisement

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সংগ্রামী, সমাজসেবী, লেখক ও সাংবাদিক নুরুল ইসলাম (৯০) আর নেই। মঙ্গলবার ১১ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় লন্ডনের একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পারিবারিক সূত্রে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তিনি ১৯৩২ সালের ১ জুন তখনকার সিলেট সদর থানা বর্তমান দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের সদরখলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল জীবন শেষে তিনি সিলেট এমসি কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯৫২-৫৩ সালে কলেজ ইউনিয়নের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন ও ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখেন। ঢাকায় ভাষা আন্দোলনরত ছাত্রদের গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে ও রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে তৎকালীন গোবিন্দপার্কে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ঐতিহাসিক প্রথম সভায় তিনি সভাপতিত্ব করার বিরল গৌরবের অধিকারী। 

১৯৫৩-৫৪ সালে তিনি সিলেট মহকুমা (বর্তমান সিলেট জেলা) ছাত্র ইউনিয়নের (ইপসু) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তখন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পাশাপাশি যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। নুরুল ইসলাম ১৯৬৫ সালের ৬ নভেম্বর ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইংল্যান্ড যান। লন্ডনে তিনি ১৯৫৮ সালের আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা, ১৯৬৩ সালে ‘ন্যাশনাল ফেডারেশন অব পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন ইন গ্রেট ব্রিটেন’ গঠনের অন্যতম প্রধান ও ১৯৬৪ সালে ‘ইস্ট পাকিস্তান হাউস’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯৬৬ সালে বাংলাদেশে ভ্রমণকালীন লন্ডনে ইস্ট পাকিস্তান হাউস কেন্দ্রিক পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীনতার নামে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে তার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়। ফলে লেখাপড়ার সেখানেই ইতি। 

তিনি দেশে ৬-দফা আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও শেষ পর্যন্ত ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ভারতে তখন ৪ ও ৫নং সেক্টরের প্রতিনিধি দেওয়ান ফরিদ গাজীর (প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা সম্পন্ন) একান্ত সচিব ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুজিবনগর সরকারের নির্দেশে বর্হিবিশ্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি আব্দুস সামাদ আজাদের সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। 

স্বাধীনতা লাভের পর বৃহত্তর সিলেট জেলাকে পূনর্গঠনের জন্য দেওয়ান ফরিদ গাজীর নেতৃত্বে সিলেটের সকল পার্লামেন্ট সদস্যকে নিয়ে গঠিত ‘সিলেট জেলা প্রশাসন পরিষদ’-এর সচিব ছিলেন। একইসঙ্গে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর ঘাতক-দালাল ও রাজাকারদের বিচারের জন্য গঠিত ‘সিলেট জেলা ফ্যাক্ট ফাইণ্ডিং কমিটি’র সঙ্গেও দীর্ঘদিন কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রবাসীদের কল্যাণার্থে ‘প্রবাসী বাঙালি কল্যাণ বোর্ড’ গঠিত হলে এটির সচিব হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন। 

১৯৭৮ সালে সিলেটে ‘বাংলাদেশ ওভারসিজ সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করা হলে তিনি এটির ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্তরাজ্যে বাঙালিদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলনের পাশাপাশি সাংবাদিকতার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি লন্ডন থেকে প্রকাশিত দেশের ডাক, পাকিস্তান টু-ডে এবং পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত ডন পত্রিকার লন্ডন প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৬৮ সাল থেকে বাংলাদেশ টাইমস ও সিলেট থেকে প্রকাশিত সিলেট বার্তা পত্রিকার লন্ডন প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেন। 

তার প্রকাশিত গ্রন্থ

ইতিহাস : ‘প্রবাসীর কথা’ (ইতিহাস: প্রবাসী পাবালকেশন্স, সিলেট: ১৯৮৯)। ইংরেজি: ‘Sojourners to Settelers: The Tales of Immigrants’ (Bangla Academy, Dhaka (2013)| নূরুল ইসলাম ২০১২ সালে বাংলা একাডেমির ফেলোশিপ লাভ করেন। ২০১৮ সালে তিনি নিজ গ্রাম সদরখলা এলাকায় ‌দক্ষিণ সুরমা পাঠাগার নামে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে সহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুনাগ্রহী রেখে গেছেন। মরহুম নুরুল ইসলাম সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহপাঠী ছিলেন। তার মৃত্যুতে সিলেট সহ দেশ ও বিদেশে পরিচিত মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। মরহুম নূরুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে তার রুহের মাগফেরাতের জন্য সকলের দোয়া কামনা করা হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement