৩০ এপ্রিল, ২০২৪, মঙ্গলবার

আসছে হাইড্রোজেন চালিত বিমান

Advertisement

প্রচলিত ধারণা বাইরে গিয়ে আসছে পুরোপুরি হাইড্রোজেন-চালিত বিমান। আগামী ৩ বছরের মধ্যেই অর্থাৎ ২০২৪ সালের মধ্যেই এই এয়ারক্রাফট আকাশে উড়বে, একইসঙ্গে সেই বছরই এই বিমানে চালু হবে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন। চলতি সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম নিউ আটলাস এবং রব রিপোর্ট।

সংবাদমাধ্যম নিউ আটলাস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সংস্থা আলাস্কা এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যৌথভাবে পুরোপুরি হাইড্রোজেন-চালিত বিমান আনার ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটিশ-আমেরিকান অ্যাভিয়েশন কোম্পানি জিরোঅ্যাভিয়া। সংস্থাটির দাবি, এই এয়ারক্রাফটটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাইড্রোজেন-চালিত যাত্রীবাহী বিমান। একইসঙ্গে সবচেয়ে বড় জিরো-এমিশন বা শূন্য কার্বন নিঃসরণকারী এয়ারক্রাফটও হবে এটি।

এছাড়া ৭৬ আসনে যাত্রী বহনে সক্ষম এই বিমানটি ২০২৪ সালের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে আকাশে উড়বে। তাদের দাবি, হাইড্রোজেন-চালিত বিমান এখন আর সুদূরপ্রসারী কল্পনা বা ধারণা নয়। ২০২৪ সালের মধ্যেই বিমানটি বাণিজ্যিকভাবে আকাশে উড়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।

ব্রিটিশ-আমেরিকান অ্যাভিয়েশন সংস্থা জিরোঅ্যাভিয়া এর আগেও হাইড্রোজেন-চালিত বিমান তৈরি করেছে। তবে সংস্থাটির সর্বশেষ প্রকল্পটি তাদের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। হাইড্রোজেন-চালিত এই বিমানটিতে ৭৬টি আসন থাকবে।

অবশ্য ইউনিভার্সাল হাইড্রোজেন এবং এইচ২ফ্লাই নামে দু’টি সংস্থাও দুইটি হাইড্রোজেন-চালিত বিমান তৈরি করছে। তবে সেই দু’টি বিমানের আসন সংখ্যা ৪০টি করে। আর তাই জিরোঅ্যাভিয়া’র সর্বশেষ প্রকল্পটি এ যাবতকালের বৃহৎ এবং ওই দুইটি সংস্থার নির্মিতব্য বিমানের আসনসংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ।

নিউ আটলাসের তথ্য অনুযায়ী, ৭৬ আসনবিশিষ্ট এই বিমানে দু’টি প্রোপেলার থাকবে। দুই পাশের দু’টি ডানায় এগুলো যুক্ত থাকবে। তবে এটিতে কোনো বাফার ব্যাটারি সিস্টেম থাকবে না। কারণ বাফার ব্যাটারি সিস্টেম যুক্ত হলে বিমান ওজন অনেক বেশি বেড়ে যাবে।

জেট ফুয়েলের পূর্ণ আকারের ট্যাংকসহ একটি স্ট্যান্ডার্ড কিউ৪০০ মডেলের বিমান ১ হাজার ২৬৮ মাইল যেতে পারে। তবে ১৪টি আসন সরিয়ে নেওয়ার পর নিজেদের হাইড্রোজেন-চালিত বিমানের জন্য জিরোঅ্যাভিয়া’র লক্ষ্য ৫০০ মাইল। এরপরও সংস্থাটির বিশ্বাস, অনেক স্বল্পমাত্রার দূরত্বে এই ফ্লাইট রেঞ্জই যথেষ্ট হবে।

সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ২০২৩ সালে হাইড্রোজেন-চালিত এই বিমানের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন শুরু হতে পারে। আর তখনই ফ্লাইট রেঞ্জের এই বিষয়টি প্রমাণ করতে চাইছে জিরোঅ্যাভিয়া এবং আলাস্কা এয়ারলাইন্স।

পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সফল হলে ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে নেদারল্যান্ডসের রটারডামে প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু করতে চায় উভয় সংস্থা। লন্ডন থেকে রটারডামের দূরত্ব ২০০ মাইল। অথ্যাৎ এটিই হবে কোনো আর্ন্জাতিক রুটে বিশ্বের প্রথম হাইড্রোজেন-চালিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট।

জিরোঅ্যাভিয়া’র প্রধান ভ্যাল মিফতাখভ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘অ্যাভিয়েশন শিল্পকে কার্বনমুক্ত করার কাজটি খুব কঠিন। কিন্তু তারপরও নতুন এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা আমাদের আকাশকে কার্বন নিঃসরণ মুক্ত রাখার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে একধাপ এগিয়ে গেছি।’

উল্লেখ্য, অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির দহনের ফলে সৃষ্ট নিঃসরণের মতো গতানুগতিক বিমানের ইঞ্জিনও গ্যাস ও অতিক্ষুদ্র দূষক কণা নিঃসরণ করে ও শব্দদূষণ সৃষ্টি করে। ফলে এগুলোর বৈশ্বিক প্রভাব ও স্থানীয় বায়ুর গুণমানে সৃষ্ট প্রভাব পরিবেশগত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া জেট বিমানগুলো কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পাশাপাশি নাইট্রোজেন অক্সাইড, অতিক্ষুদ্র দূষণকারী কণা নিঃসরণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক বিমান চলাচল ওই বছর নিঃসৃত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মোট ২ দশমিক ৪ শতাংশ উৎপাদন করেছিল। আর তাই হাইড্রোজেন-চালিত বিমানের ব্যবহার বেশ পরিবেশবান্ধব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement