২৬শে মার্চ আজ, এদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঘুমিয়ে থাকা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ট্যাংক, কামান, মেশিনগান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। মুহূর্ত বিলম্ব না করে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
ওয়্যারলেস ও বেতারযন্ত্রে সেই ঘোষণা পৌঁছে যায় দেশের প্রতিটি প্রান্তে। শুরু হয় প্রতিরোধযুদ্ধ। ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি সেনারা। তাই স্বাধীনতা ঘোষণার এই দিনটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় দিন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ১৮ মিনিটে তার মুখ নিঃসৃত বাণী মুক্তির মন্ত্রে জাগিয়েছিল দেশকে। মঞ্চে উচ্চারিত রাজনীতির কবির প্রতিটি নির্দেশ জাতির মুক্তির জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১৮ মিনিটের অলিখিত ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই ভাষণ থেকেই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার অনন্ত প্রেরণা পায় দেশবাসী।
তখন থেকেই স্বাধীনতার সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রামের মন্ত্র উদ্বেলিত করেছিল জনগণকে। একাত্তরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। আজ শনিবার, ২৬ মার্চ, ৫২তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল লাল সবুজের বাংলাদেশের।
স্বাধীনতার পর থেকে নানা প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে, স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতা রোখার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে প্রগতির পথে। এ দেশে ক্ষুধায়, দুর্যোগে মানুষ আর্তনাদ করে না, নেই সেই আগের গগনবিদারী হাহাকার।
১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীন দেশে মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বার্ষিক বাজেট ছিল। আজ তা পরিণত হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকায়। ১২৯ ডলার থেকে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৯১ ডলার হয়েছে। মাথাপিছু আয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখে আজ বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্ববাসীও গর্ব করে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও দেশজ উৎপাদন, বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং সম্পদ উৎপাদন ও আহরণ বেড়েছে।
‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র দেশ হিসেবে যারা অতীতে আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তারাও এখন থ বনে গেছে। দারিদ্র্য ও দুর্যোগ জয় করে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের দিকে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ছাড়াও নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। নানা অর্জনে ভরা ঝুড়ি নিয়ে এ বছর জাতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আজ ঢাকাসহ সারাদেশে প্রত্যুষে তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে।