১৯ মে, ২০২৪, রবিবার

কন্টেইনার খুলতেই বেরিয়ে এলো ৩৪ কোটি টাকার অবৈধ সিগারেট!

Advertisement

শুল্ক সুবিধার কাপড় ও এক্সেসরিজ আমদানির বদলে ৩৪ কোটি টাকার বিদেশী সিগারেট আমদানি এবং শুল্ক ফাঁকির এক চাঞ্চল্যকর চালান জব্দ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কাস্টমস গোয়েন্দা দল।

ঘোষণায় ছিল বন্ড বা শুল্ক সুবিধার কাপড় এবং এক্সেসরিজ আমদানির, আর আমদানিকারক ছিল কুমিল্লা ইপিজেডের ‘বাংলাদেশ টেক্সটাইলস এন্ড কেমিক্যাল ফাইবার ইন্ডাষ্ট্রি লিমিটেড’।

বৃহস্পতিবার কন্টেইনার খোলার পর চালানটিতে ঘোষণার কোন পণ্য না মিলে উল্টো মিলেছে বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট আর সিগারেট। দুটি কন্টেইনার খোলার পর থরে থরে সাজানো সিগারেট মিলেছে এক কোটি ১৩ লাখ শলাকা; যার শুল্কসহ বাজার মূল্য ৩৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে শুল্ক পরিমান দাঁড়ায় ২৭ কোটি টাকা।

অভিযোগ উঠেছে, চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার আগে থেকেই আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বিভিন্ন অপকৌশলে চালানটি ছাড়ের একাধিক চেষ্টা করে। কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তাকে চালানটি আটক না করার হুমকিও দেয়া হয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে। কিন্তু কাস্টমস দলের কাছে আগে থেকে গোয়েন্দা তথ্য থাকায় তারা বন্দরের মাধ্যমে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস গোয়েন্দা দল এআইআর শাখার প্রধান ও সহকারী কমিশনার রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, একাধিক কৌশল ছিল সেই চক্রের কিন্তু আমরা তো সচেতন ছিলাম; পরে সতকর্তা আরো বাড়াই। যাতে কোনভাবেই চালানটি ছাড় না পায়।

তিনি বলেন, আমদানিকারক ৪১০ কেজি কাপড় এবং ১০ টন ২৭০ কেজি এক্সেসরিজ আমদানির ঘোষণা দেয় কিন্তু দিনভর কায়িক পরীক্ষার পর কোথাও সেই পণ্য পাওয়া যায়নি। কন্টেইনার খুলে কায়িক পরীক্ষার পর তিন ধরনের বিদেশি সিগারেট পাওয়া যায়। যেগুলোর শুধু শুল্কই আসে ২৭ কোটি টাকার। এই বিপুল রাজস্ব আমরা আটকে দিতে পেরেছি। এখন আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কুমিল্লা ইপিজেডের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ টেক্সটাইলস অ্যান্ড কেমিক্যাল ফাইবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড’ চীন থেকে কাপড় ও কাপড়ের সরঞ্জাম ঘোষণায় বন্ড সুবিধার আওতায় দুই কন্টেইনার পণ্য আমদানি করে। চালানটি চীনের সাংহাই বন্দর থেকে চালানটি গত ১১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। চালান খালাসে আমদানিকারকের নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আলমগীর এন্ড সন্স লি. (এআইএন-৩০১১৪৩৮৮৬) ১৩ সেপ্টেম্বর বিল অব এন্ট্রি নং সি-২০৬৪৩৯ জমা দেন।

ওই চালানের বিষয়ে গোপন সংবাদ থাকায় কাস্টম হাউস, চট্টগ্রামের এআইআর শাখা কতৃক পণ্যচালানটি লক করে ১৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে সিএন্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি, বন্দর নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও অন্যান্য সংস্থার সদস্য ও প্রতিনিধিগণের উপস্থিতিতে এআইআর শাখার কর্মকর্তা কতৃর্ক পণ্যচালানটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়।

কায়িক পরীক্ষাকালে কাভার্ড ভ্যান থেকে সব পণ্য বের করে আনার পর দেখা যায়, ৫৬৫টি কার্টনের প্রতিটিতে সিগারেটের দুইটি করে কার্টন পাওয়া যায়। এতে বিদেশি ৩টি ব্রান্ডের মধ্যে ৪৪ লাখ শলাকা ইজি ব্রান্ডের, ৩৭ লাখ শলাকা এক্সএসও ব্রান্ডের এবং ৩২ লক্ষ শলাকা ওরিস ব্রান্ডের অর্থাৎ মোট এক কোটি ১৩ লাখ শলাকা সিগারেট পাওয়া যায়। যার আনুমানিক আমদানি মূল্য সাড়ে সাত কোটি টাকা। পণ্যচালানটিতে শর্ত সাপেক্ষে আমদানিযোগ্য ও উচ্চ শুল্কের পণ্য সিগারেট আমদানি করে আনুমানিক প্রায় ২৭ কোটি টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকির অপচেষ্টা করা হয়।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আলমগীর অ্যান্ড সন্স লি. এর মালিক আলমগীর কবিরকে অসংখ্যবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে সাংবাদিক পরিচয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পর থেকে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement