১২ মে, ২০২৪, রবিবার

ইতিহাসের উত্তাল ও রক্তাক্ত দিন ৭ নভেম্বর আজ

Advertisement

আজ ৭ নভেম্বর। জাসদের ‘সিপাহি জনতার বিপ্লব’ এবং বিএনপির ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ সময়ের ব্যবধানে ফিকে হয়ে গেছে। ৭ নভেম্বরকে এখন আর কেউ বিপ্লব বলে না। কিন্তু ৭ নভেম্বর ইতিহাসের বুকে যে ক্ষত রেখে গেছে, তা সহজে উপশম হওয়ার নয়। এদিনটি দেশের ইতিহাসে একটি ঘটনাবহুল ও আলোচিত-সমালোচিত দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার মাধ্যমে ক্ষমতার পটপরিবর্তন ঘটে। এর আড়াই মাস পর ৩ নভেম্বর শুরু হয় সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের ঘটনা। এসব ঘটনার একপর্যায়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দী হন। ৭ নভেম্বর অপর এক অভ্যুত্থানে তিনি মুক্ত হন।

১৯৭৫ সালের শেষ দিকে দ্রুত রাজনৈতিক রক্তাক্ত উত্থান-পতনের ঘটনাবলির মধ্যে এদিন তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ক্ষমতা সংহত করেন। বিএনপির মতে, ’৭৫ সালের এই দিনে আধিপত্যবাদী শক্তির নীলনকশা প্রতিহত করে সিপাহি-জনতা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিল। বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেছিল জিয়াউর রহমানকে।

জাসদসহ সমমনা সংগঠনগুলোর ব্যাখ্যা হচ্ছে- ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ক্ষমতালিপ্সু অফিসারদের ক্ষমতা দখল-পুনর্দখলের জন্য পরস্পরবিরোধী অবস্থানের প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের এই দিনে ‘সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান’ ঘটেছিল। বিএনপি দিনটিকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করলেও জাসদ মানে ‘সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে। এ ছাড়া কয়েকটি সংগঠন ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে দিনটিকে পালন করে থাকে। তারা মনে করে, সিপাহি বিপ্লবের নামে এদিন থেকে শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের হত্যা প্রক্রিয়া। শেষ হয় ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।

১৫ আগস্টের কালরাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যার মাত্র ৭৯ দিন পর অশুভ শক্তি ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী চার জাতীয় নেতাকে। এ প্রেক্ষাপটে ৩ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর সামরিক বাহিনীর মধ্যে একাধিকবার অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটে। একপর্যায়ে জিয়াউর রহমান গৃহবন্দি হন। ওইসব ঘটনায় অনেক মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা ও জওয়ানের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। সিপাহি বিপ্লবের নামে ১৯৭৫ সালের এই দিনে প্রথমে হত্যা করা হয় খ্যাতনামা তিন মুক্তিযোদ্ধাকে। তারা হলেনÑ খালেদ মোশাররফ বীরউত্তম, কেএন হুদা বীরউত্তম এবং এটিএম হায়দার বীরবিক্রম। দশম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদর দপ্তরে অবস্থানকালে একেবারে কাছ থেকে তাদের গুলি করে হত্যা করেন কোম্পানি কমান্ডার আসাদ ও জলিল।

৬ ও ৭ নভেম্বর সংঘটিত অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহের বীরউত্তম। বন্দিদশা থেকে জিয়াকে মুক্ত করেছিলেন তিনি। এর পর অতিদ্রুত নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে স্বীয় পদে আসীন হন জিয়াউর রহমান। রাজনৈতিক নেতৃত্বের চরম ব্যর্থতার কারণে তখন দেশ চলে যায় সামরিক শাসনের অধীনে। জিয়াউর রহমান প্রথমে উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদে আসীন হন। একপর্যায়ে বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতিও হন তিনি। অন্যদিকে বন্দিদশা থেকে জিয়াকে মুক্ত করেও বাঁচতে পারেননি কর্নেল তাহের। কোর্ট মার্শালের বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।

‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাণী দিয়েছেন। সেই সঙ্গে এবারের ৭ নভেম্বর উপলক্ষে দুদিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দলটি। কর্মসূচির প্রথম দিন গতকাল শনিবার কাজী বশির মিলনায়তনে (মহানগর নাট্যমঞ্চ) আলোচনাসভা করেছেন তারা। আজ বেলা ১১টায় দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন সিনিয়র নেতাসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।

এদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ‘সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে আজ বেলা ১১টায় মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার জাসদ নেতা কর্নেল তাহের বীরউত্তমের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে। সেই সঙ্গে শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে দলটি। বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও (বাংলাদেশ জাসদ) বিকাল ৩টায় ঢাকার ২২/১ তোপখানা রোড শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement