পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ কোভ্যাক্সের (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগ) আওতায় চলতি মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান থেকে ৩৫ লাখ ডোজ করোনা টিকা পাবে। এর পাশাপাশি চীন থেকে বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করা টিকার চালান আসা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা এখন ভালো অবস্থানে রয়েছি। এ জন্য একটি নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ লাইন তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এখন টিকার আর কোনো সঙ্কট থাকবে না। করোনা টিকাদান কর্মসূচি নিরবচ্ছিন্নভাবে চলবে।
ড. মোমেন বলেন, কোভেক্সের মাধ্যমে জাপান থেকে বাংলাদেশ ২৫ লাখ ডোজ টিকা পাবে। এ ছাড়া ইইউ থেকে পাবে ১০ লাখ। এ সব টিকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি।
ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি কোভ্যাক্সের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫ লাখ মডার্নার টিকা পেয়েছে। বাংলাদেশকে আরো টিকা সরবরাহের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জানিয়েছে।
কোভ্যাক্সের মাধ্যমে চলতি মাসে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ ডোজ টিকা আসছে বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তবে এসব টিকা কোন দেশ থেকে আসছে তার উৎস প্রকাশ করা হয়নি।
চীনের সিনোফার্ম থেকে টিকার নিরবচ্ছিন্ন চালান পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ২০ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশে এসেছে। আগামী তিন মাস পরিকল্পনা অনুযায়ী দেড় কোটি ডোজ টিকার চালান আমরা পেয়ে যাব। এরপর আরো টিকার সরবরাহ পেতে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে। অতিরিক্ত কী পরিমাণ টিকা আমাদের প্রয়োজন হবে তা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জানাতে বলেছে চীন। অনেক টিকা একসাথে আসায় টিকার মেয়াদের বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি অনুযায়ী অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, টিকা দেবে না এ কথা ভারত কখনো বলেনি। আমরা আশা করি ভারতে করোনা মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হলে এবং টিকা উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে চুক্তি অনুযায়ী বাকি টিকার সরবরাহ আমরা পাব।
বাংলাদেশ সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে মোট তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করেছিল। কিন্তু ভারতে করোনা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হলে টিকা রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশকে গত মার্চ পর্যন্ত ৭০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করতে পেরেছিল। আগামী মাস থেকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার চালান আবার আসার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। চীন ও রাশিয়ার সাথে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের জন্য আলোচনা চলছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রেও অগ্রগতি হয়েছে। ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশের অনেক বেসরকারি কোম্পানি বিদেশ থেকে টিকা আমদানি করতে চাইছে। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। আমরা সরকারিভাবে বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে যাব। সরকার দেশের ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে করোনা টিকার আওতায় আনতে চায়। এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কোভেক্স থেকে বাংলাদেশ মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য টিকা পাবে। চলতি বছরই এই উৎস থেকে ছয় কোটি ৮০ লাখ টিকা আসার কথা। কিন্তু বিশেষ করে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং অন্যান্য দেশ টিকা ছাড় করতে দেরি করায় কোভ্যাক্স এ পর্যন্ত তার লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মজুদে থাকা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনে নিচ্ছে কোভ্যাক্স। কোভ্যাক্স বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপ্রেয়ার্ডনেস ইনোভেশন ও ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স গ্যাভি দ্বারা পরিচালিত বৈশ্বিক উদ্যোগ। স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য করোনাভাইরাসের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা এই উদ্যোগের লক্ষ্য। সম্প্রতি বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর নেতৃবৃন্দ বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ১০০ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ সব টিকার বেশির ভাগই কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।