১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, শুক্রবার

ঢাকা ও কুষ্টিয়া জেলায় এখন মৃত্যু বেশি

Advertisement

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়াবহ এক সপ্তাহ পার করল বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার দেশে সংক্রমণের ৭০তম সপ্তাহ (৪-১০ জুলাই) শেষ হয়েছে। এই সপ্তাহে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ৭৩ হাজার ৫৯ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৭৭ জনের। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সোয়া এক বছর ধরে চলমান এই মহামারিতে এমন পরিস্থিতি আর দেখা যায়নি।

গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে মূলত ঢাকার বাইরে সংক্রমণ বাড়ছে। তবে কিছুদিন ধরে ঢাকায়ও আবার সংক্রমণ ও মৃত্যু ঊর্ধ্বমুখী। গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি ৪০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭৭ জন মারা গেছেন ঢাকা বিভাগে। তবে জেলাওয়ারি হিসাবে গত এক সপ্তাহে করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা জেলায়। ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলায় এই সময়ে মারা গেছেন ১৬১ জন। আর এই এক সপ্তাহে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০১ জন মারা গেছেন কুষ্টিয়ায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, সারা দেশের অনেক রোগী চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসছেন। ঢাকায় এখন মৃত্যু বেশি হওয়ার এটি একটি কারণ হতে পারে। তা ছাড়া ঢাকায় জনসংখ্যা এবং রোগী দুটোই বেশি। তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ঈদের পর সংক্রমণ বেড়েছিল। খুলনা অঞ্চলে ঢেউটা শুরু হয়েছে একটু দেরিতে এবং তুলনামূলক জনসংখ্যাও সেখানে বেশি। চলতি সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ স্থিতিশীল হতে পারে। তবে মৃত্যু নিম্নমুখী হবে ঈদের পর। এর মধ্যে ঈদকেন্দ্রিক যাতায়াত আবার বেড়ে গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।

সংক্রমণের শুরু থেকেই রাজধানী ও ঢাকা বিভাগে শনাক্তের সংখ্যা ও মৃত্যু বেশি। দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় এখানে করোনা শনাক্তের পরীক্ষাও হচ্ছে অনেক বেশি। একক জেলা হিসেবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৫ হাজার ৭০১ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের হিসাবও অন্তর্ভুক্ত। তবে সংখ্যার দিক থেকে মৃত্যু অনেক বেশি হলেও শনাক্ত রোগীর সংখ্যার বিপরীতে ঢাকায় মৃত্যুর হার তুলনামূলক কম। শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় ঢাকা জেলায় করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। আর কুষ্টিয়ায় এই হার ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। অন্যদিকে বিভাগওয়ারি হিসাবে গতকাল পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ আর খুলনা বিভাগে এই হার ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৫ এপ্রিল থেকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছিল সরকার। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছিল। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা তৈরি হয়। জুনের মাঝামাঝি থেকে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। বিশেষ করে খুলনা ও রাজশাহী অঞ্চলের পরিস্থিতি খারাপ আকার ধারণ করে। রাজশাহীতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও খুলনায় এখনো পরিস্থিতি খারাপ। বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকাসহ দেশের সব জেলাতেই সংক্রমণ বাড়ছে। গতকাল শেষ হওয়া সপ্তাহে (৪-১০ জুলাই) প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার ৪৩৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হয়েছে ১৮২ জনের। এই সপ্তাহে মৃত্যুর দিক থেকে খুলনা ও ঢাকার পর আছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বিভাগ।

টানা চার দিন দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১১ হাজারের বেশি থাকার পর গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ৭৭২ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন রোগীর সংখ্যা কমলেও পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার কমেনি। সে হিসাবে বলা যায়, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তুলনামূলক পরীক্ষা কম হওয়ায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে। এই সময়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৭ হাজার ৮৮৪ জনের। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, যা আগের দিনের চেয়ে সামান্য বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত আরও ১৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। খুলনা বিভাগে মারা গেছেন ৫১ জন।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১ জুলাই থেকে সারা দেশে দুই সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। তবে এখন পর্যন্ত সংক্রমণে এসব বিধিনিষেধের প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, বিধিনিষেধের প্রভাব চলতি সপ্তাহ থেকে দৃশ্যমান হতে পারে। চলতি সপ্তাহ থেকে সংক্রমণে কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে মৃত্যু কমতে আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে।

গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১০ লাখ ৯ হাজার ৩১৫ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৯ জন। আর মারা গেছেন ১৬ হাজার ১৮৯ জন।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, লকডাউন বা বিধিনিষেধ জারি করে সংক্রমণ সাময়িক ধীর করা যাবে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না। এ জন্য লকডাউনের পাশাপাশি রোগী ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পরীক্ষা বাড়িয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইসোলেশন (বিচ্ছিন্ন রাখা), আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসাদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) করা, স্বাস্থ্যবিধি বিশেষত শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement