দেশজুড়ে ভয়াবহ রূপে বিস্তৃত হচ্ছে করোনা ভাইরাস। বৈশ্বিক এই ভাইরাসের সংক্রমণের লাগাম টানতে গত ১ জুলাই থেকে লকডাউন চলছে। এরই মধ্যে গতকাল সোমবার নতুন রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় নতুন রেকর্ড দেখতে হয়েছে বাংলাদেশকে। গতকাল সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৯৬৪ জন। আর একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১৬৪ জনের। এ হিসাবে প্রতি ৯ মিনিটে একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রতি মিনিটে রোগী শনাক্ত হয়েছে সাতজন। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর অর্ধেকের বেশি গ্রামের বাসিন্দা। অথচ কিছুদিন আগেও গ্রাম ছিল অনেকটাই নিরাপদ। করোনার ভারতীয় ধরন ডেল্টার কারণে গ্রামের পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে বিপজ্জনক। লকডাউনের প্রথম দিন ১ জুলাই ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়। ৪ জুলাই মারা যান ১৫৩ জন। গতকাল এই প্রাণহানির সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ১৬৪ জনে। গত বছরের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এটিই সবচেয়ে বেশি শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডের মধ্যেই সংক্রমণ রোধে সরকার গতকাল চলমান লকডাউন ১৪ জুলাই পর্যন্ত আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়েছে। দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনার রোগী পাওয়া যায়। এর পর সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে জুন-জুলাইয়ে সর্বোচ্চ চূড়ায় (পিক) পৌঁছায়। ওই সময়ে একদিনে
চার হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল এবং মারা গিয়েছিলেন ৫০-৬০ জন। এর পর করোনার দ্বিতীয় টেউ চলতি বছরের মার্চ থেকে শুরু হয়। দ্বিতীয় টেউয়ের মধ্যে একদিনে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ হাজার ২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৯ হাজার ৯৬৪ রোগী শনাক্ত হয়। এর আগে ১ জুলাই ২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ৮২২ জন শনাক্ত হয়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৬৪ জনের মধ্যে ১০৯ জন পুরুষ এবং ৫৫ জন নারী। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৪০ জন, চট্টগ্রামে ১৮, রাজশাহীতে ১৬, খুলনায় ৫৫, বরিশালে ৯, সিলেটে ৮, রংপুরে ১৬ ও ময়মনসিংহ বিভাগে দুজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোজার ঈদের পর সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় করোনার ভারতীয় বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এখন তা সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোয় চাপ বেড়েছে। শুরু হয়েছে নানা সংকট।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১৪ হাজার ৫৮৮টি সাধারণ শয্যা এবং ১ হাজার ২০৩টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ শয্যার বিপরীতে ৭ হাজার ৯৯১ জন এবং আইসিইউ শয্যার বিপরীতে ৮৩৩ জন রোগী ভর্তি আছেন। করোনা ডেডিকেটেড অনেক হাসপাতালে শয্যার থেকে বেশি রোগী ভর্তি আছেন, আবার কোনো কোনো হাসপাতালে শয্যা খালিও আছে। আইসিইউ শয্যার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর অর্ধেকের বেশি গ্রামের বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি গ্রামের। অর্থাৎ ৫০ শতাংশের বেশি রোগী গ্রাম থেকে এসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, রোগীরা হাসপাতালে আসছেন আক্রান্ত হওয়ার বেশ পরে, যখন পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়ে পড়ছে।
ডা. খুরশীদ বলেন, এখন বর্ষার মৌসুম। অনেকেই করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হলেও সাধারণ সর্দি-জ্বর বা কাশিতে আক্রান্ত বলে ধরে নিচ্ছেন। পরীক্ষা করাচ্ছেন না বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন না। আমরা মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের গ্রামে গ্রামে মাইকিং করার পরামর্শ দিয়েছি। বাড়ি বাড়ি রোগীর খোঁজ রাখতে বলেছি।