৭ নভেম্বর, ২০২৪, বৃহস্পতিবার

দেশ বরেণ্য গীতিকার ফজল-এ খোদা আর নেই

Advertisement

‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ এমন অসংখ্য কালজয়ী গানের গীতিকার ফজল-এ-খোদা আর নেই। করোনায় আক্রান্ত হয়ে আজ রোববার ভোর ৪টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। ৮১ বছর বয়সী এই গীতিকার তিন ছেলে, স্ত্রী ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাকে রায়ের বাজার কবরস্থানে দাফন করা হবে।

বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক এই গুণী মানুষটির জন্ম ১৯৪১ সালের ৯ মার্চ, পাবনার বেড়া থানার বনগ্রামে। বাবা মুহাম্মদ খোদা বক্স এবং মা মোসাম্মাৎ জয়নবুন্নেছা’র প্রথম সন্তান ফজল এ খোদা। ফজল-এ-খোদ’র কর্মজীবন শুরু হয় বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসাবে ১৯৬৩ সালে। ১৯৬৪ সালে টেলিভিশনে তিনি তালিকাভুক্ত হন। শিশু কিশোর সংগঠন-শাপলা শালুকের আসরের প্রতিষ্ঠাতা ফজল-এ-খোদা ‘মিতা ভাই’ নামেও পরিচিত। তার লেখা বহু গান শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। এর মধ্যে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি মুক্তিযুদ্ধে সাত কোটি মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে।

১৯৭১-এ অসহযোগ অন্দোলন চলাকালে তার লেখা গণসংগীত ‘সংগ্রাম, সংগ্রাম, সংগ্রাম চলবে, দিন রাত অবিরাম’ গানটি তৎকালীন টেলিভিশন প্রচার করে। ফজল-এ-খোদার লেখা উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আরও রয়েছে-‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না’, ‘কলসি কাঁধে ঘাটে যায় কোন রূপসী’, বাসন্তী রং শাড়ি পরে কোন রমণী চলে যায়’, আমি প্রদীপের মতো রাত জেগে জেগে’, ‘প্রেমের এক নাম জীবন’, ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো, পথের ধুলোয় লুটোবে’ প্রভৃতি।তার গানগুলো প্রয়াত বশীর আহমেদ, আবদুল জাব্বার, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, রথিন্দ্রনাথ রায়ের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের কণ্ঠে দর্শক শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেছে। আজাদ রহমান, আবদুল আহাদ, ধীর আলী, সুবল দাস, কমল দাশ গুপ্ত, আবেদ হোসেন খান, অজিত রায়, দেবু ভট্টাচার্য, সত্য সাহা প্রমুখের মতো সংগীতজ্ঞ ফজল-এ-খোদা’র গানগুলোতে সুর করেছেন।মূলত ছড়া দিয়ে তার লেখালেখি শুরু। তার ছড়াগ্রন্থের সংখ্যা ১০টি, আর কবিতা গ্রন্থ ৫টি।

গান, নাটক, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে তার সর্বমোট বইয়ের সংখ্যা ৩৩টি। এ ছাড়া সত্তর দশকে শিশু কিশোরদের মাসিক পত্রিকা ‘শাপলা শালুক’ ফজল এ খোদা’র নিপুণ সম্পদনায় প্রকাশিত হতো।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হলে ফজল-এ-খোদা তার দুঃখ এবং ক্ষোভ গানের মাধ্যমে প্রকাশ করেন, যা সেই সময়ের কল্পনাতীত ঘটনা। বশীর আহমদের সুরারোপে মোহাম্মদ আবদুল জাব্বারের গাওয়া ফজল-এ-খোদা’র সেই গানটি ছিল ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো/ পথের ধুলোয় লুটোবে/ সাত রঙে রাঙা স্বপ্ন-বিহঙ্গ/ সহসা পাখনা লুটোবে/ এমন তো কথা ছিলো না’। গানটি ১৯৭৬ সালে রেকর্ড ও বেতারে প্রচারিত হয়। ফজল-এ-খোদা’র লেখা এবং মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের সুরারোপ করা ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি ২০০৬ সালে বিবিসি’র সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের সেরা ২০টি গানের তালিকায় ১২তম স্থান পায়। ১৯৬০ দশক থেকে শুরু করে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫০ বছর ফজল-এ-খোদা অসংখ্য দেশাত্মবোধক, আধুনিক, লোক সংগীত ও ইসলামী গান লিখেছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement