দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি। এর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রোববার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত অন্তত ৭০ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
সোমবার (১২ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য তথ্য ইউনিটের (এমআইএস) সহকারী পরিচালক ও হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. কামরুল কিবরিয়া স্বাক্ষরিত নিয়মিত ডেঙ্গু প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১২৩ জন এবং চলতি মাসের ১২ দিনে মোট রোগী ভর্তি হয়েছে ৪২৫ জন।
এ বছরে মোট ৭৯৬ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৩২ জন ঢাকার বাইরের। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এখন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ২০৯ জন। আর ঢাকার বাইরে ভর্তি মাত্র একজন।
ডেঙ্গুর লার্ভা শনাক্ত ও মশক নিধনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিয়মিত অভিযান চলছে। এসব অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনা মালিকদের নিয়মিত জরিমানা করা হচ্ছে।‘
পূর্ণবয়স্ক মশা ও শূককীট ধ্বংস করার জন্য তারা দুটি ভিন্ন ধরণের কীটনাশক ব্যবহার করছেন।
কিন্তু কোনোভাবেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না ডেঙ্গুর প্রকোপে বেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা। মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ দিনের আলো শেষ হওয়ার আগেই মশার হাত থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে বাঁচাতে ঘরে কয়েল জ্বালায়। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর মশার কামড় থেকে সুরক্ষা পেতে তাদের ভরসা কয়েল। একটু আরামের ঘুমের জন্য ও ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় এই কয়েল আজ প্রায় দুর্লভ। মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হতে দেশকে রক্ষা করতে সরকার কঠোর লকডাউন ঘোষনা করেছে। এই লকডাউন উপেক্ষা করে যদি কেউ দোকানপাট, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান খোলা রাখে,তাহলে তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
সরকারের এই ঘোষনায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলের দোকান মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সন্ধ্যা সাতটার পর তারা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। রাস্তায় কোনো লোকজন থাকে না, আর পুলিশে ভয়ে কেউ ঘর থেকেও বের হয় না। ফলে তারা দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। সাধারণ জনগণ সরকার এই ঘোষনায় খুশি হতে পারেনি। তারা না পারছে একবারে বেশি করে কয়েল কিনে ঘরে মজুদ করতে। আবার না পারছে প্রতিদিনের টা প্রতিদিন কিনতে। বর্ষা মৌসুমের কারণে কয়েল মজুদ করাও সম্ভব নয়। ফলে তাদের সাশ্যয়ী হওয়ায় তাদের ভরসা হল এই কয়েল। জনগণের স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আজ থেকেই মশার কয়েল বিক্রয়কারী দোকান সমূহ খোলা রাখতে হবে। কুষ্টিয়া জেলায় মাসুম স্টোরের মালিক মাসুম মিয়া বলেন-মানুষ করোনা আতঙ্কে ঘর থেকে বের হয় না। তারপর আবার রয়েছে সরকারি আদেশ। রাস্তার পাশে তার দোকান,র্যাব-পুলিশের আনাগোনা লেগেই আছে। সন্ধ্যার পর দোকান খোলা রাখলে কোনো কাস্টমার আসে না, আগের তুলনায় তার কয়েল কেনা-বেচা দুটোই কম। জুবায়ের স্টোরের মালিক জলিল মিয়া বলেন-সন্ধ্যার পর লোকজনই আসে না, তাই কয়েলও বিক্রি হয় না। ওই এলাকার বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক জনৈক পিকুল উদ্দিন বলেন-লকডাউনের কারণে তারা দোকান খুলতে পারছেন না,লোকজন আসে না,যার কারণে কয়েল খুব কম বিক্রি হচ্ছে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যদি জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করে আজ থেকে সর্বত্র মশার কয়েল বিক্রয়কারী দোকান সমূহ একটি নির্দিষ্ট সময় খোলা রাখার নির্দেশনা জারী করেন, তাহলে মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।