মহামারি করোনার ভয়াবহ প্রকোপের মধ্যে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপও। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১৭৯ জন। যাদের মাত্র একজন ঢাকার বাইরে। বাকি ১৭৮ জনই ঢাকায়।
সরকারি তথ্যমতে, ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭৩ জন। চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়েছে ফিরেছেন ৪৯৪ জন।
গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ তেমন না থাকলেও, এ বছর আবারও সংক্রমণের হার বাড়ছে। ২০১৯ সালের পরিস্থিতির সঙ্গে এ বছরের ডেঙ্গু সংক্রমণের তুলনা করা যায়। সে বছর দেশে প্রায় এক লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং মারা গিয়েছিলেন ১৭৯ জন।
২০১৯ সালের মে মাসে দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৯৩ জন। পরের মাসেই রোগীর সংখ্যা বেড়ে গিয়ে এক হাজার ৮৮৪ জনে দাঁড়িয়েছিল। এরপর জুলাইতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৬ হাজার ২৫৩ হয়েছিল। সে বছর মোট এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, যা এক বছরে সর্বোচ্চ সংক্রমণ।
এ বছর এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারিভাবে ডেঙ্গুতে প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে গত ১ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ঢাকা শহরের এক হাজার ১২টি বাড়িতে জরিপ চালিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে ২০৭টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। সংস্থাটি বলছে, জুন নাগাদ ডেঙ্গু রোগী অনেক বেড়েছে।
এ বছর এ পর্যন্ত মোট ৫৬৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩২ জন ঢাকার বাইরের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২৯ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে এবং তা করোনা মহামারির কারণে ইতোমধ্যে বিপর্যস্ত হওয়া স্বাস্থ্যখাতকে আরও চাপের মুখে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, একইসঙ্গে ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া অনেক বেশি ঝামেলাপূর্ণ এবং এ কারণে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপের তথ্যমতে, নির্মাণাধীন ভবনের জমে থাকা পানি, প্লাস্টিকের ড্রাম, বালতি, পানির ট্যাংক, বাড়ি করার জন্য নির্মিত গর্ত, টব, বোতল ও লিফটের গর্তে এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে।
রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোড, লালমাটিয়া, সায়দাবাদ এবং উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকায় এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
ডেঙ্গুর লার্ভা শনাক্ত ও মশক নিধনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিয়মিত অভিযান চলছে। এসব অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনা মালিকদের নিয়মিত জরিমানা করা হচ্ছে।‘
পূর্ণবয়স্ক মশা ও শূককীট ধ্বংস করার জন্য তারা দুটি ভিন্ন ধরণের কীটনাশক ব্যবহার করছেন।