করোনা মহামারির মধ্যে ঈদুল আজহায় সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বসেছে পশুর হাট। কিন্তু গাবতলী হাটের বাইরে কড়াকড়ি থাকলেও ভেতরে একেবারে উধাও করোনা সতর্কতা। মাস্ক পরে থাকতে অনীহা বেশির ভাগ ক্রেতার। হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব রক্ষার তোয়াক্কা করছেন না বিক্রেতারা। এ যেন এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ হাটের সকলেই।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতে। এ হাটের বাইরে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য যথেষ্ট চেষ্টা দৃশ্যমান। কিন্তু হাটের ভেতরের চিত্র ঠিক তার উল্টো। হাটের ব্যাপারীরা স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করছেন অহরহ। বৃষ্টির পানি জমে হাট হয়ে উঠেছে কর্দমাক্ত। সেখানে ক্রেতারা চলাচল করতে গেলেও জটলা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। শারীরিক দূরত্ব রক্ষার তাগিদ নেই কারও।
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের নির্দেশে হাট কর্তৃপক্ষের জারিমানা করা হয়।
পশুর হাটে সরকারি নির্দেশনাসহ স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে না মানলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই বাজার সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন মেয়র।
সোমবার সকালে গাবতলী হাট পরিদর্শনে যান ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি ভঙের দৃশ্য দেখে হাট কর্তৃপক্ষের ১০ লাখ টাকা জরিমানা করতে ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন তিনি। এছাড়া এক ঘণ্টার জন্য একটি হাসিল ঘর বন্ধ করে দেন।
আজ সোমবার বেলা ১১টার পর হাটে গিয়ে মেয়র স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গের দৃশ্য দেখে এই জরিমানা করেন । এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন মেয়র আতিকের এপিএস ফরিদ আহমেদ।
ঈদের দুই দিন আগে গাবতলীসহ সব হাটে কোরবানির পশু বিক্রি বেড়েছে। হাটে আসছে প্রচুর ক্রেতা-বিক্রেতা। তবে স্বাস্থবিধি মেনে হাট বসানো কথা থাকলেও কোনো হাটেই ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।
করোনা পরিস্থিতিতে পশুর হাটের জন্য ১২টি নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। যার বেশির ভাগই মানতে দেখা যায়নি গাবতলীর পশুর হাটে।
হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটের সামনে একদল স্বেচ্ছাসেবী মাস্ক সরবরাহ করছেন সকলকে। হাটের কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানতে সকলকে অনুরোধ করা হচ্ছে। মাস্ক পরতে ও হাত ধুতে বলা হচ্ছে বারবার। হাটে প্রবেশমুখে রয়েছে পানিসহ হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। কিন্তু সেখানে কাউকে হাত ধুতে দেখা যাচ্ছে না।
হাটের ভেতরে ঢুকে দেখা গেল, পশুর ব্যাপারীদের অনেকের মুখে নেই মাস্ক। জিজ্ঞাসা করলেই অভিন্ন জবাব- ‘মাস্ক আছে, এখন খুলে রাখছি, তবে সব সময় পরি’।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে গরু নিয়ে গাবতলী হাটে এসেছেন ব্যাপারী মোহাম্মদ আকরাম। মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় মাস্ক পরি। তবে এখন বেশ গরম, তাই খুলে রেখেছি। চা খেতে আসছিলাম তো, তাই এখন পরিনি।’
গরুর হাটে ক্রেতা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ৬ টি গরু নিয়ে আসছি। প্রত্যেকটি গরুর দাম সাড়ে ৩ লাখের ওপরে। এখন পর্যন্ত একটা গরু বিক্রি করতে পারিনি। কী হবে বুঝতে পারছি না। করোনার কারণে এবার কাস্টমারই নাই।’
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা ইমারত হোসেন গাবতলীর হাটে গরু কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘হাটের ভেতরে যেখানে দরদাম হচ্ছে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। তবে হাটের বাইরে তো সবাইকে মাস্ক দিচ্ছে। মাইকেও বারবার মাস্ক পরার কথা বলছে।’
শক্তি ফাউন্ডেশনের একজন স্বেচ্ছাসেবী নাইমুর রশিদ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে তাদের একটি টিম গাবতলীর গরুর হাটে কাজ করছেন। তারা স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষকে সচেতন করছেন। নাইমুর বলেন, ‘আসলে আমরা চেষ্টা করছি, জোর তো করতে পারি না। স্বাস্থ্যবিধি বলতে যা বোঝায়, তা মানছেন না গরুর ব্যাপারীরা। আমরা ক্রেতা-বিক্রেতা সবার জন্যই মাস্ক সরবরাহ করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের টিমে ৪০ জন কাজ করছেন। আমরা মানুষকে বোঝাচ্ছি। হাটের ভেতরে গিয়ে যদি কেউ মাস্ক খুলে ফেলেন, তা আমাদের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। বাইরে থেকেই আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
গাবতলী পশুর হাটে দায়িত্ব পালন করছিলেন দারুস সালাম থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জুয়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘হাটে যারা এসেছেন তাদের প্রত্যেককে মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে। যাদের কাছে নেই, তাদের সকলকে মাস্ক সরবাহ করা হচ্ছ। কিন্তু অনেক ব্যাপারী হাটের ভেতরে ও বাইরে মাস্ক পরছেন না। অনেকে আবার থুতনির মধ্যে মাস্ক ঝুলিয়ে রাখছেন। তাদের নাকি গরম লাগে।’
করোনা পরিস্থিতিতে গাবতলীর গরুর হাটে ক্রেতার উপস্থিতি একেবারেই কম। তা নিয়ে হতাশ ব্যাপারীরা। পাবনার আমিনপুর থেকে গাবতলী এসেছেন রাজীব মিয়া। তিনি বলেন, ‘কাস্টমারই তো নাই। অনেকে দেখতে আসতেছে, দরদাম করে নিবো বলেই চইলা যাইতেছে, কী যে করি। পরশু আইছি, মাত্র একটা গরু বেঁচতে পারছি।’
হাট ইজারাদার লুৎফর রহমানের ছেলে রাকিব ইমরান বলেন, ‘ গাবতলী অনেক বড় গরুর হাট। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু ক্রেতা-বিক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আমাদের তেমন কিছু করার তো নেই।’