১০ অক্টোবর, ২০২৪, বৃহস্পতিবার

আজ লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হবে আরাফাত ময়দান

Advertisement

বাংলাদেশে আজ জিলহজ মাসের ৮ তারিখ হলেও সৌদি আরবে ৯ জিলহজ। হাজীদের ‘উকুফে আরাফা’ বা আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিন। বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলনের দিন। করোনা মহামারীর কারণে সীমিতসংখ্যক ৬০ হাজার হজযাত্রী আরাফাতের ময়দানে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা-শারিকালাকা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত করে তুলবেন আকাশ-বাতাস। এক জান্নাতি আবহ তৈরি হবে পুরো ময়দানে। সবার পরনে সাদা দুই খণ্ড বস্ত্র। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ, রহমতপ্রাপ্তি ও নিজের গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে অশ্রুসিক্ত ফরিয়াদ জানাবেন সমবেত মুসলমানেরা। সব হজযাত্রী ও বিশ্ব মুসলিমের জন্য প্রদান করা হবে খুতবা। যাতে থাকবে মুসলিম উম্মাহর জন্য দিকনির্দেশনা। বিশ্বভ্রাতৃত্বের এক অনুপম দৃশ্যেরও অবতারণা হবে আজ এই ময়দানে।

আজ জোহরের নামাজের ওয়াক্তের আগেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা মুসলমানরা সমবেত হবেন মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে। ১৪০০ বছর আগে এই ময়দানেই রাসূল সা: লক্ষাধিক সাহাবিকে সামনে রেখে ঐতিহাসিক বিদায়হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এই ময়দানেই ইসলামের পরিপূর্ণতার ঘোষণা দিয়ে কুরআনের আয়াত নাজিল হয়েছিল।

হাজীরা আজ আরাফাতের বিশাল প্রান্তরে অবস্থান করে মসজিদে নামিরাহ থেকে প্রদত্ত খুতবা শুনবেন এবং একসাথে জোহর ও আসরের নামাজ একই ইমামের পেছনে জোহরের ওয়াক্তে আদায় করবেন। সূর্যাস্তের পর ময়দান ত্যাগ করবেন।

৮ জিলহজ থেকে টানা পাঁচ দিন ধরে হজের আরো অনেক করণীয় থাকলেও আজ ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনকেই হজের দিন বলা হয়। হজের কার্যাদি আনুষ্ঠানিকভাবে পালন শুরু হয়েছে গতকাল মিনার তাঁবুতে অবস্থানের মধ্য দিয়ে। এই ময়দানে জোহরের সময় পরপর জোহর ও আসরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করবেন হাজীরা। মুসাফির হওয়ার কারণে নামাজ কসর করবেন (চার রাকাতের স্থলে দুই রাকাত)। নামাজের আগেই মসজিদে নামিরাহ থেকে খুতবা দেবেন নির্ধারিত খতিব। এর আগে পরে হজযাত্রীদের কণ্ঠে উচ্চারিত ‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে পুরো ময়দান। আমির-ফকির, ধনী-গরিব, সাদা-কালোর ভেদাভেদ থাকবে না সেখানে। সবার পরনে একই ধরনের সেলাইবিহীন কাপড়, আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা, আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ এবং তারই কাছে গুনাহ মাফ ও রহমতপ্রাপ্তির আকুতি।

সূর্যাস্তের সাথে সাথেই আবার মিনায় ফেরার পথে মুজদালিফা নামক স্থানে রাতে অবস্থান নেবেন হাজীরা। ওই স্থানে রাতে অবস্থান করবেন খোলা আকাশের নিচে। সেখানে মাগরিব ও এশার নামাজ এক সাথে আদায় করবেন। মিনায় জামারাতে শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপের জন্য এখান থেকেই কঙ্কর সংগ্রহ করবেন তারা। রাতে সেখানে অবস্থানের পর কাল ফজরের নামাজ শেষে সূর্যাস্তের আগেই মিনার দিকে রওনা হবেন। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা একজন হাজীর জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয়। এই অবস্থান হজের অন্যতম ফরজ। হাজীরা এই দিনটিসহ পুরো হজকার্য সম্পাদনের জন্য আজীবন স্বপ্ন লালন করেন।

হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল সা: বলেছেন, এমন কোনো দিবস নেই যেখানে আল্লাহ তায়ালা আরাফাহ দিবস থেকে বেশি বান্দাহকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং আল্লাহ নিশ্চয় নিকটবর্তী হন ও তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন, বলেন, ওরা কী চায়? (মুসলিম)। আরেক হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা আরাফায় অবস্থানরতদের নিয়ে আকাশবাসীদের সাথে গর্ব করেন। তিনি বলেন, আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখ, তারা আমার কাছে এসেছে আলুথালু ও ধুলায় আবৃত অবস্থায়। (মুসনাদে আহমাদ)

আরাফাতের ময়দান দোয়া কবুলের জায়গা। এখানেই আদি পিতা হজরত আদম ও হাওয়া আ: -এর পুনর্মিলন হয়েছিল এবং তাদের দোয়া কবুল হয়েছিল মর্মে বর্ণনা পাওয়া যায়। এই ময়দান রাসূল সা:-এর বিদায়হজের ভাষণের স্মৃতিবিজড়িত। সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাজীরা বিভিন্ন গ্রুপে এবং আলাদা আলাদাভাবে দোয়া করতে থাকেন। এ সময় অঝোর ধারায় কান্নাকাটি করেন হাজীরা। গুনাহ মাফের আকুতি ছাড়াও জীবনের সব চাওয়াই আল্লাহর দরবারে পেশ করেন। সূর্যাস্তের পর আরাফার ময়দান ত্যাগের সময় নিজেকে নির্ভার-নিষ্পাপ জ্ঞান করে মুজদালিফার দিকে এগোতে থাকেন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ছুটে যাওয়ারা।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement