সুইডিশ পার্লামেন্টে সরাসরি ভোটে মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে স্টেফান লফভেন পুনরায় সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। গত ২১ জুন সুইডিশ পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লফভেন ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে সরাসরি ভোটাভুটির মাধ্যমে অনাস্থা জ্ঞাপন করা হয়।
সেদিন পার্লামেন্টের মোট ৩৪৯ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দলের প্রধান এবং সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লফভেনের বিপক্ষে ভোট দেয় ১৮১ জন, পক্ষে ভোট দেয় ১০৯ জন, ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে ৫১ জন এবং অনুপস্থিত ছিলেন ৮ জন। গণতান্ত্রিক সুইডেনের ইতিহাসে কোন সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে অনাস্থা জ্ঞাপনের ঘটনা সেটাই ছিল প্রথম।
অনাস্থা জ্ঞাপনের আট দিন পর গত ২৮ মে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে স্টেফান লফভেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং একই সঙ্গে তিনি ৯০ দিনের মধ্যে সুইডিশ পার্লামেন্টের উপ-নির্বাচন হওয়ার বিষয়টিও নাকচ করে দিয়ে সংবিধান অনুযায়ী সংসদের স্পিকারের ওপর পরবর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়াটি ছেড়ে দেন।
স্টেফান লফভেন তাঁর পদত্যাগের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেছিলেন, নিয়মানুযায়ী সুইডিশ পার্লামেন্টের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হবে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এরই মধ্যে আবারো তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করে সরকার গঠন করাও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সুতরাং নতুন সরকার এলেও তাঁর সময়কাল বেশি দিনের জন্য হবে না।
এছাড়াও চলমান করোনা পেন্ডামিকের কারণে উপ-নির্বাচন বিঘ্নিত হলে দেশ সাংবিধানিক সংকটের মধ্যে পড়বে, যা দেশকে আরো ভয়াবহতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুন কোন সরকার আসাই যুক্তি সংগত যারা পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করবেন এবং দেশকে সাংবিধানিক সংকট থেকে রক্ষা করবেন।
সুইডেনের সাংবিধানিক নিয়মানুযায়ী সংসদের স্পিকার কোনো দল বা জোটকে তখন সরকার গঠন করতে অনুরোধ করবেন। এভাবে যদি পর পর চারবার সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে কোনো দল বা জোট সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়, তাহলে সংবিধান অনুযায়ী স্পিকার ৯০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দিতে বাধ্য হবেন।
এমতাবস্থায় পার্লামেন্টের স্পিকার সংবিধান অনুযায়ী কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার অংশ হিসেবে বিরোধী জোটের নেতা উলফ ক্রিস্টেনসনকে অনুরোধ করেন সরকার গঠনের জন্য। ক্রিস্টেনসনও সরকার গঠনে ব্যর্থ হন এবং তিনি পুনরায় স্পিকারকে অনুরোধ করেন ভিন্ন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। তখন স্পিকার বাধ্য হয়ে পুনরায় সদ্য প্রধানমন্ত্রীত্ব হারারো স্টেফান লফভেনের দ্বারস্থ হন। বুধবার (৭ জুলাই) পুনরায় সংসদে ভোটাভুটি হলে দুই সপ্তাহ পূর্বে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানো স্টেফান লফভেন পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সংসদের আস্থা অর্জন করেন এবং প্রধানমন্ত্রী হন। তবে এক্ষেত্রে তাঁকে সংখ্যালঘিষ্ঠ সরকার প্রধান হিসেবে দেশ চালাতে হবে। সংসদের ভোটাভুটিতে স্টেফান লফভেনের পক্ষে পড়ে ১১৬টি ভোট, বিপক্ষে পড়ে ১৭৩টি ভোট এবং ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে ৬০ জন সংসদ সদস্য।
সুইডেনের সংবিধান অনুযায়ী কোনো সরকারের প্রতি অনাস্থা জানানোর জন্য বিরোধী শিবিরের পক্ষে ১৭৫টি ভোটের দরকার হয়। সুতরাং বিরোধী শিবিরের চেয়ে ৫৭টি ভোট কম পেলেও সোস্যাল ডেমোক্র্যাটের প্রধান স্টেফান লফভেনের সরকার গঠনে কোনো বাধা রইল না, যদিও তাঁকে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত সংখ্যালঘিষ্ঠতার হুমকির মুখে থাকতে হবে।