রিট শব্দটির অর্থ হলো আদালত বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ঘোষিত বিধান বা আদেশ। কারো মৌলিক অধিকার লংঘিত হলে আমাদের সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগ তা বলবৎ করতে পারে এবং বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনাকে কার্যকর করতে পারে।
বাংলাদেশের সংবিধান হাইকোর্ট বিভাগকে শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রে আদি এখতিয়ার দিয়েছে, সেটি হল রীট জারীর এখতিয়ার। হাইকোর্ট এই রিট বিষয়ে অবারিত ক্ষমতা ব্যাবহার করতে পারে ।
কারো মৌলিক অধিকার লংঘিত হলে তিনি সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ প্রদত্ত অধিকারবলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য রিট পিটিশন দায়ের করতে পারেন। যেহেতু রাষ্ট্রই মেীলিক অধিকার লংঘন করে তাই শুধুমাত্র রাষ্ট্র কিংবা রাষ্টীয় কোনো সংস্থায় কর্মরত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে রিট করা যায়।
পাঁচ ধরণের রীট রয়েছে, যেমনঃ
ক) বন্দী প্রদর্শন রীট (Writ of habeas corpus) : কোনো ব্যক্তিকে সরকার বা অন্য কেউ আটক করলে কি কারণে তাকে আটক করা হয়েছে তা জানার জন্য বন্দীকে আদালতে হাজির করার যে নির্দেশ দেওয়া হয় তাই বন্দী প্রদর্শন রিট।
খ) পরমাদেশ বা হুকুমজারি রীট (Writ of mandamus): কোনো অধ:স্তন আদালত, ট্রাইব্যুনাল, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি তার আইনগত দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকার করে কিংবা ব্যর্থ হয় তাহলে উচ্চতর আদালত যে আদেশের মাধ্যমে উক্ত আইনগত দায়িত্ব পালন করতে উক্ত আদালত বা ট্রাইব্যুনালকে বাধ্য করে তাকে হুকুমজারী রিট বা পরমাদেশ বলে।
গ) প্রতিষেধক বা নিষেধাজ্ঞা মূলক রীট (Writ of prohibition): এই রিটের এখতিয়ার বলে হাইকোর্ট সরকার বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে এমন কোন কাজ করা বা করার উদ্যোগ হতে বিরত থাকার জন্য আদেশ প্রদান করতে পারেন,যা সরকার বা উক্ত কর্তৃপক্ষ আইনত করতে পারেন না কিন্তু করতে উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।
ঘ) উৎপ্রেশন রীট (Writ of certiorari): অধস্তন আদালত ক্ষমতা বহির্ভূত কোন কাজ করেছে কিনা তা তদারকি করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক এই রীট জারী করা হয়। কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল,ব্যক্তি বা সংস্থা যদি তার আইনগত ক্ষমতাকে লংঘন করে কিংবা principle of natural justice যদি ভঙ্গ করে তবে হাইকোর্ট বিভাগ যে আদেশের মাধ্যমে উক্ত কাজ নাকচ করে দেয় তাকে উৎপ্রেষণ রীট বলে।
নোটঃ নিষেধাজ্ঞামূলক রীট হল প্রতিরোধক (Preventive) অর্থাৎ কোন কাজ হবার পুর্বেই এমন রিট দ্বারা ওই কাজকে বারিত করা হয়। আর উৎপ্রেষণ রীট হল সংশোধক (Curative) অর্থাৎ কোন কাজ হয়ে যাবার পর সংশোধন করবার জন্যে উক্ত রিটটি করা হয় ।
ঙ ) কারণ দর্শাও রীট (Writ of quo warranto) : কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো সরকারি পদ দাবী করে, যে পদের যোগ্যতা তার নাই অথবা অবৈধভাবে যদি কোনো সরকারি পদ দখল করে, তাহলে উচ্চতর আদালত যে আদেশের মাধ্যমে যে নির্দেশ দিয়ে থাকে তাকে কারণ দর্শাও রীট বলে ।
অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে রিট এবং সাধারণ মামলা দু’টিই করা চলে। রিটে খরচ কিছুটা বেশি হলেও সাধারণত তা দ্রুত নিষ্পত্তি হয় ।