চাকরি বা ভর্তি যাই হোক। কোথাও আবেদন করতে হলে, নিজের ছবি বা সনদপত্রগুলো প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তাকে দিয়ে সত্যায়িত করার অভিজ্ঞতা সবারই কমবেশি রয়েছে। নোটারির বিষয়টাও একই রকম। তফাৎ হলো যে সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত কোন ব্যক্তির মাধ্যমে সত্যায়নটা হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে নোটারি পাবলিকের কাজ অনুমোদিত আইনজীবীরাই করে থাকেন। আর এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হয় নোটারিস অর্ডিন্যান্স এবং নোটারিস রুলস ১৯৬৪ দ্বারা।
নোটারির আওতা
যে কোন গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট কোথাও উপস্থাপনের পূর্বে নোটারি করা আবশ্যক। বিশেষত বিদেশগামীদের ক্ষেত্রে। এছাড়া জমিজমা-সংক্রান্ত দলিল-দস্তাবেজ, যেকোনো হলফনামা, অঙ্গীকারনামা, বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, গাড়ি বেচাকেনা, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, চারিত্রিক সনদ, জন্ম-মৃত্যুর সনদ, বিদেশে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন প্রভৃতি বিষয় নোটারি পাবলিক দিয়ে সত্যায়িত করা বাধ্যতামূলক। যারা দেশের বাইরে যেতে চান তাদের নিজ ডকুমেন্ট অনুবাদ করে নোটারি করতে হয়।
এছাড়াও অর্থ পরিশোধ সংক্রান্ত ডিমান্ড নোট ও চার্টার পার্টিসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক দলিলাদির ক্ষেত্রেও নোটারির ব্যবহার রয়েছে ।
যেভাবে করতে হবে
নোটারি পাবলিকের প্রথম নিয়ম হচ্ছে মূল ব্যক্তির উপস্থিতি। অর্থাৎ যার ডকুমেন্ট, সত্যায়িত করার সময় তাকেই নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হবে । নোটারি বিধিমালা ৬০(ক) অনুযায়ী নোটারি পাবলিকের নির্দিষ্ট কার্যালয় থাকা আবশ্যক।
কোন রকম গুরুত্বপূর্ণ দলিল বা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নোটারি করতে গেলে দায়িত্বরত নোটারি পাবলিক সবকিছু পরীক্ষা করে দেখবেন। তিনি সন্তুষ্ট হলেই তবে নোটারি করে দিবেন। নোটারি পাবলিক যদি কোন দলিল নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন সেটা সত্যায়িত করতে তিনি আইনত বাধ্য নন। তাই তাকে জোর করা যাবে না । বিয়ে, তালাক বা লেনদেন সংক্রান্ত হলফনামার ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতেই সত্যায়িত করবেন দায়িত্বরত নোটারি পাবলিক। হলফনামায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ছবি থাকা বাঞ্ছনীয় ।
নোটারি করতে যে সাধারণত অনেক টাকা খরচ হয় তা নয়। তবে ডকুমেন্ট ভেদে নোটারির খরচ নির্ধারিত হয়। সত্যায়িত করার আগে নোটারি পাবলিকের সাথে আলাপ করে নেয়াই ভালো ।
বাড়তি সতর্কতা
কোন দলিল বা ডকুমেন্ট নিয়ে সন্দেহ দূরীভূত করার জন্যই মূলত নোটারির প্রচলন হয়েছে। যেখানে সত্যায়নের মাধ্যমে হলফনামা বা ডকুমেন্টকে আরও নিখুঁত করা হয়। সেখানেই যদি দেখা যায় নোটারি পাবলিকটি ভূয়া তাহলে সবটাই মাটি। সেকারণে নোটারি পাবলিকের অনুমোদন সনদ যাচাই করে নিতে হবে । নাহলে সত্যায়িত করা দলিলটিই বিফলে যাবে। আবার যারা বিদেশে বা এম্বেসিতে পাঠানোর জন্যে কাগজপত্র নোটারি করেন তারাও হেনস্তার শিকার হবেন । অনেকে ভূয়া নোটারির সিলমোহর দিয়ে প্রতারিত করেন। আবার অনেকে দেখা যায় মৃত কোন নোটারি পাবলিকের সিল ব্যবহার করে প্রতারণা চালিয়ে যান পুরোমাত্রায়। তাই নোটারি পাবলিক পরিচিত হলে ভালো হয় ।