সাধারণ ও স্বাভাবিক ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে দেখা দেয় সংঘাত। দীর্ঘদিনের দাম্পত্য জীবনেও মুখোমুখি হয় অনাহুত মনোমালিন্যের। এসবের জের ধরে ভাঙে দীর্ঘ পারস্পরিক সৌহার্দ্য। প্রয়োজন হয় আইনি লড়াইয়ের। কিন্তু অনেকেই আইনি লড়াইয়ে যেতে চান না । ভেবে নেন পারস্পরিক সমঝোতা হলে মামলা প্রত্যাহার করা যাবে কিনা।
বিচারপ্রার্থী আদালতে মামলা করার আগে চিন্তা করেন, প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ আছে কি-না। তবে আইন অনুযায়ী, মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় জানা থাকা জরুরি।
ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার
সাধারণত সিআর কেস এবং জিআর কেস এই দু’রকম ফৌজদারি মামলা হয়। জিআর কেসগুলো সাধারণত থানায় দায়ের করা হয় আর সিআর কেসগুলো দায়ের হয় সরাসরি ফৌজদারি আদালতে।
জিআর কেসগুলোতে বাদীর পক্ষে রাষ্ট্র নিজেই আইনজীবী নিযুক্ত করেন, যাদের বলা হয় হয় পাবলিক প্রসিকিউটর। আর সিআর মামলাগুলোতে নালিশকারীকেই ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবী নিযুক্ত করে মামলা পরিচালনা করতে হয়।
কোনো মামলায় পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাব কিংবা মামলার পক্ষগণের মধ্যে সমঝোতার কারণে মামলা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গটি সামনে আসতে পারে। মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে দুই রকমের বিধান রাখা আছে।
যেসব জিআর কেসে রাষ্ট্র নিজেই পক্ষ, সেসব মামলায় পাবলিক প্রসিকিউটরের তরফ থেকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারায় মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা যায়। আর সিআর কেসে নালিশকারী বা তার পক্ষ থেকে নিযুক্ত আইনজীবী মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারেন ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৮ ধারার অধীনে।
৪৯৪ ধারার অধীনে মামলা প্রত্যাহারে বেশ কিছু বিষয় আদালতের পর্যবেক্ষণে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। যেমন-প্রথমত, মামলা প্রত্যাহারের আবেদন কেবল পাবলিক প্রসিকিউটরের তরফ থেকেই হতে হবে। এজাহারকারী কিংবা আসামির আবেদন কিংবা সরকারের কোনো আদেশের বলে মামলা প্রত্যাহার করা যাবে না। দ্বিতীয়ত,মামলা প্রত্যাহারের যুক্তিযুক্ত কারণ কোঁসুলির পক্ষ থেকে আদালতের সামনে ব্যাখ্যা করতে হবে। মামলা প্রত্যাহার সম্পর্কে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। বিচারক প্রয়োজন বোধ করলে মামলা এগিয়ে নিয়ে যাবেন ।
ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো মামলার চূড়ান্ত আদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত বাদী যদি ম্যাজিস্ট্রেটের সন্তুষ্টি বিধান করতে পারেন যে, তাঁকে নালিশ প্রত্যাহারের অনুমতি দেয়ার পর্যাপ্ত কারণ রয়েছে, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে সেই নালিশ প্রত্যাহারের অনুমতি দেবেন এবং আসামিকে খালাস দেবেন।
এই ধারাটি শুধু নিষ্পত্তিযোগ্য মামলার ক্ষেত্রে, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ ধারায় বর্ণনা করা হয়েছে।
দেওয়ানি মামলা প্রত্যাহার
দেওয়ানি কার্যবিধির ২৩ আদেশের ১ নিয়ম অনুসারে, দেওয়ানি মামলা হওয়ার পর যে কোনো সময়ে বাদী সব বা যে কোনো বিবাদীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে বা আংশিক দাবি পরিত্যাগ করতে পারেন। আদালত এই যদি মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, কোনো পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য মোকদ্দমাটি ব্যর্থ হতে বাধ্য এবং মামলার বিষয়বস্তুর জন্য কিংবা কোনো দাবির অংশের জন্য নতুনভাবে মোকদ্দমা করার জন্য বাদীকে অনুমতি দেয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, সে ক্ষেত্রে আদালত উপযুক্ত শর্তে বাদীকে তার মোকদ্দমা প্রত্যাহার করে অথবা তার আংশিক দাবি পরিত্যাগ করার অনুমতি দিতে পারবেন ।
প্রত্যাহার পরবর্তী অবস্থা
মামলা প্রত্যাহার করা হলে একই বিষয়ে আবার নতুন করে মামলা করা যায় না। দেওয়ানি মামলার ‘রেস জুডিকাটা’ বা দোবারা নীতি এবং ফৌজদারি মামলার ‘ডাবল জিওপারডি’ বা দোবারা সাজা নীতির আলোকে এ ধরনের মামলাকে বাধা দেওয়া হয়। তবে রিভিশন দায়ের করে উচ্চ আদালতেকে সন্তুষ্ট করা সাপেক্ষে আদালত পুনর্বিচারের আদেশ দিতে পারেন ।